Saturday 13 January 2018

অর্হণা কেন পড়বেন / অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ

অর্হণা অসাধারণ একটি উপন্যাস। একটি উপন্যাস পাঠক যে প্রত্যাশা নিয়ে কিনেন এবং পড়তে বসেন তার সবকটি এই উপন্যাসে পুরোপুরি বিদ্যমান। জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই, যা এখানে বিধৃত করা হয়নি। জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি দিক পর্যন্ত ঘটনায় ঘটনায় অনাবিল যত্নে উঠে এসেছে। অর্হণা উপন্যাসের ভূমিকা লিখেছেন হায়াৎ মামুদ। তিনি নিজেও উপন্যাসের একটি চরিত্র। তাঁর বর্ণনায় অর্হণা কেমন উপন্যাস তা জানা যাক। তিনি বলেছেন, চরিত্র দিয়ে বর্ণিত ভূমিকাসমৃদ্ধ উপন্যাস ইতোঃপূর্বে আমি পড়িনি। তাই ‘অর্হণা’ ছিল আমার কাছে 
ড. মোহাম্মদ আমীন ও শ্যামল পাল
একটি নতুন ধারণার বিকাশ।সমাজরাষ্ট্রসাহিত্য  সংস্কৃতির সঙ্গে প্রেমভালোবাসা আর মানবীয় মূল্যবোধের সুষমিত প্রগাঢ়ত্বের সঙ্গে এতগুলো বিস্ময়কর চরিত্রের চরিত্রায়ণ উপন্যাসটিকে করে তুলেছে অনবদ্য।
 চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথনসজ্জা আর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা এতই নিবিড় যেঅনুভবকেও রীতিমতো হার মানিয়ে দেয়। স্যমন্তক পড়েও আমার এমন মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। উপন্যাস যে জীবনের নিবিড় গভীরতা থেকে তুলে আনা ঐকান্তিক দর্শন তা আমি অর্হণা পড়ে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এটি এমন একটি উপন্যাস যা পাঠককে শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বের যাবতীয় বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। অভিভূত করতে পারে সমকালীন বিশ্বের বোদ্ধামহলের চিন্তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের অনুভূতির।এমন একটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে,  বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমি কামনা করি বা না- করিউপন্যাসটি যোগ্যতাবলে পাঠকের হৃদয়ে নিজের আসনটি গেড়ে নিতে সক্ষম হবে।

 আমি মনে করিমোহাম্মদ আমীনের অর্হণা’ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী অর্হণা হয়ে সবার মনে সাড়া দিতে সক্ষম হবে। উপন্যাসটি যিনিই পড়বেন, তিনিই এই বোধে উদ্দীপ্ত হবেন। উপন্যাসে চরিত্রবর্গের আলাপচারিতায় সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতিসংস্কার-কুসংস্কারধর্মআর্থসামাজিক ব্যবস্থা, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বৈশ্বিক চেতনাবোধ  সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত নির্দেশিত হয়েছে তা গভীর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অভাবিত আন্তরিকতাপুষ্ট ঋদ্ধ দ্যোতনায় দ্যোতিত। সর্বোপরি উপন্যাসের নায়িকা কল্পনার সঙ্গে নায়কের ভীষণ স্পর্শকাতর সম্পর্ক পাঠককে নুতন ভাবনায় মারাত্মক দ্বিধায় ফেলে দেবে।অর্হণার আলোচনায় বিশিষ্ট সমালোচক এরশাদ হোসেন আবীর লিখেছেনএমন জীবন্ত উপন্যাস আমি আর পড়িনি।  পরিচিত নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়তে কত ভালো লাগে, তা না পড়লে শুধু বলে বা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এমন উপন্যাস যে কোনো পাঠকের মনে মনোহর শিহরন জাগিয়ে তুলে  প্রেমে আর বোদ্ধমায় সমৃদ্ধতায়। গ্রন্থটির প্রতিটি লাইন অমিয় বাণীর চিরন্তন বাস্তবতা। প্রতিটি লাইন স্মরণীয় বাণী হয়ে অনেকদিন মোহিত রাখবে পাঠককে।

উপন্যাসটি কেমন হবেএই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবভাষা মানুষকে এখনো এমন হাতিয়ার দিতে পারেনিযদ্দ্বারা মানুষ তার সব 
অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ
উপলব্ধিকে বাক্য-ভাষায় অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তেমনি অর্হণার পাণ্ডুলিপি পারে আমার অনুভবে সঞ্চারিত আবেশরাশিকে সম্পূর্ণরূপে কথায় প্রকাশ করতে পারব না। শুধু বলবোঅসাধারণঅসামহৃদয়কাড়া একটি উপন্যাস।যার প্রত্যেকটি লাইন নীরব চন্দ্রিমায় রাতের কোলে ঘেষেও জোছনাকে বাক্য বানিয়ে পাঠকের মনে বিপুল ঝড় তুলে দিতে নিমিষ চিন্তার মতো কিন্তু প্রকৃতির মতো বিরল স্থায়িত্বে। তাই বইটি কেমনপ্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারিএর অবিকল উত্তর পেতে হলে ‘অর্হণা’ পড়তে হবে।

 অর্হণা এমন একটি উপন্যাস যা আপনাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিসাহিত্যিক  পণ্ডিতবর্গের বন্ধু বানিয়ে দিতে সক্ষম হব। আমি বলবঅর্হণা শুধু উপন্যাস নয়পাঠকের তীর্থভূমি। যেখানে প্রকৃতি বিছিয়ে রেখেছে তার অশেষ ঐশ্বর্য থরে থরে। ‘অর্হণারূপ উপন্যাসের তীর্থক্ষেত্র থেকে আপনি পেতে পারেন সাহিত্যের নির্ঝর সমৃদ্ধিবিমল মুগ্ধতা। পরিচিত হতে পারেন বাংলা  বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে। উপন্যাসটি পড়লে আপনি জীবনবোধে উদ্দীপত্ত হবেন, কল্যাণে বারিত হবেন এবং মননশীলতায় আসবে মুগ্ধকর পরিবর্তন। যে কোনো বয়সের পাঠকের জন্য উপযোগী উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে মন চাইবে না।

অর্হণা প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা। প্রকাশক : শ্যামল পাল। দাম : ২৫০ টাকা। পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয় এর স্টলে।

No comments:

Post a Comment