‘বড়ো হুজুর ও বরুমতির মেলা’ আমার লেখা একটি উপন্যাস। বড়ো হুজুর, বরুমতি এবং আমাকে নিয়ে বইটি রচিত। আমি মানে
শিশু। বড়েোহজুর আমার পিতামহ, ডাকতাম দাদা। বরুমতি কোনো মেয়ে নয়। নদীও নয়, একটি খাল। বর্ষাকালে বরুমতি প্রচণ্ড প্রতাপশালী হয়ে উঠত। জলের তোড়ের দুকূল ভাসিয়ে দিত। ভাসিয়ে দিত অনেকের ফসল, বালিতে ভরাট করে দিত জমি। একসময় সারা বছরই কিছু না কছিু জল থাকত। বরুমতি এখন বর্ষা ছাড়া প্রায় সারা বছর জলহীন থাকে, মৃতপ্রায়। বলা হয়, বড়ো হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবি করায় এবং বড়ো হুজুরের জমি, বালি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ায়, হুজুরের অভিশাপে বরুমতির এই করুণ মৃতপ্রায় অবস্থা হয়েছে। আমাদের বাড়ির কিছু পূর্বে বরুমতি এঁকেবেঁকে দক্ষিণ হতে উত্তরে চলে গিয়েছে। নানা কাহিনি আছে বরুমতির জন্ম নিয়ে, গতি নিয়ে। বরুমতির তীরে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে একদিনের জন্য বিরাট মেলা বসত। মেলা নিয়েও আছে মেলা কাহিনি। মেলা উপলক্ষ্যে পুরো এলাকায় সাজ সজ রব পড়ে যেত। মেলার দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বরুমতির জলে স্নান করত। স্নান করলে সব উদ্দেশ্য পূরণ হতো। পাপ সব ধুয়ে মুছে বরুমতির জলের সঙ্গে অজানায় চলে যেত। নানা উদ্দেশ্যে নানা কিছু মানত করত।
মুসলমানেরাও মেলায় যেত, তবে স্নান করত না। কোনো কিছু মানত করত না। মেলায় হাজার হাজার শিশুকিশোর, যুবক-যুবতী আর বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সামগম হতো। নানা ধরনের খাবার, শস্য, সব্জি, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, খেলনা প্রভৃতি পাওয়া যেত। দোলনা, নাগরদোলায় চড়া
আমার মেলায় যাওয়া রোধ করার জন্য বড়ো হুজুর কত নৃশংস হয়ে উঠতেন এবং কী ব্যবস্থা নিতেন অন্যদিকে, আমি মেলায় যাওয়ার জন্য কী করতাম ইত্যাদি বিষয় বইটির বিষয় বস্তু। পুস্তকটিতে তৎকালীন ধর্মীয় গোঁড়ামির নির্যাতনে পিষ্ঠ এক অসহায় শিশুর জীবনচরিতের একটি করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রকাশক : পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
প্রচ্ছদ : মামুন হোসাইন।
প্রাপ্তিস্থান : অমর একুশে গ্রন্থমেলার পুথিনিলয় স্টল, রকমারি প্রভৃতি
No comments:
Post a Comment