Thursday 4 January 2018

চর্যাপদের উৎসভূমি ড. মোহাম্মদ আমীনের একটি ব্যতিক্রমী গবেষণা গ্রন্থ / শাহিদা সুলতানা অনি


‘চর্যাপদের উৎসভূমি’ ড. মোহাম্মদ আমীন-এর লেখা একটি গবেষণা গ্রন্থ।চর্যাপদকে বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন বলে দাবি করা হয়। তাছাড়া আরো কয়েকটা ভাষাভাষীও চর্যাপদকে নিজেদের ভাষার আদি
নিদর্শন বলে দাবি করে। যদিও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যা পদসংগ্রহ প্রকাশিত হবার পর চর্যার ভাষা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বাংলাভাষী ছাড়াও  ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের  পণ্ডিতবর্গও চর্যার  ভাষার উপর নিজ নিজ মাতৃভাষার অধিকার দাবি করেছেন। হরপ্রসাদশাস্ত্রী  তাঁর সম্পাদিত হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান দোহা গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ   কৃষ্ণাচার্যের দোহা এবং ডাকার্ণব-কে সম্পূর্ণ প্রাচীন বাংলার নিদর্শন বলে দাবি করেছেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কারক ও সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভও ওই দাবি সমর্থন করেন। তবে, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বিজয়চন্দ্র মজুমদার তাঁদের দাবি অস্বীকার করে চর্যা অন্যান্য কবিতাগুলির সঙ্গে বাংলা ভাষার সম্বন্ধের দাবি অস্বীকার করেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়  তাঁর The Origin and Development of the Bengali Language গ্রন্থে চর্যাগান দোহাগুলির ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ছন্দ বিশ্লেষণ করে শুধু এগুলিকেই প্রাচীন বাংলার নিদর্শন হিসাবে গ্রহণ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিস  থেকে প্রকাশিত Les Chants Mystique de Saraha et de Kanha গ্রন্থে সুনীতিকুমারের অভিমত সমর্থন করেন। 

অনেকে মনে করেন, চর্যা মৈথিলী বা পূরবীয়া হিন্দিতে রচিত।  চর্যাপদের উৎসভূমি গ্রন্থের রচয়িতা ড. মোহাম্মদ আমীন এসব বিতর্কে যাননি। তিনি বলেছেন, চর্যার দাবি যত বেশি ভাষাভাষী করুন না কেন, এতে চর্যার
মর্যাদা কমে না বরং বাড়ে। অধিকন্তু তিনি বলেছেন, চর্যার গুরুত্ব অপরিসীম বলেই, বিভিন্ন ভাষাভাষী চর্যাকে তাদের ভাষার আদি নিদর্শন দাবি করেছেন এবং করছেন। ড. মোহাম্মদ আমীনের গবেষণার বিষয়, চর্যা কোন ভাষার আদি নিদর্শন তা নয়। বরং চর্যাগুলি কোথায় এবং কোন স্থানে রচিত হয়েছে তা। তিনি গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, চর্যাগুলি যারাই বা যে ভাষাভাষীর দ্বারা রচিত হোক না কেন, এগুলি চট্টগ্রামে রচিত হয়েছে। মূলত এটিই ড. মোহাম্মদ আমীন রচিত ‘চর্যাপদের উৎসভূমি’ গ্রন্থের বিষয়বস্তু। বইটি পড়লে জানা যাবে কেন, তিনি চর্যার উৎসভূমি চট্টগ্রাম বলেছেন। গ্রন্থটিতে লেখক চর্যাপদের উৎসভূমি হিসেবে চট্টগ্রামকে উল্লেখ করার পক্ষে যে যুক্তিসমূহ দেখিয়েছেন, তা ইতিহাস, বাস্তবতা ও তৎকালীর রাজনীতিক পরিস্থিতির আলোকে যেমন যৌক্তিক তেমনি অকাট্য।

No comments:

Post a Comment