Saturday 1 August 2015

বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস অনবদ্য একটি গ্রন্থ / হায়াৎ মামুদ





বইয়ের নাম ‘বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস’। নাম দেখে আগ্রহটা বেড়ে গেল। পাতা উল্টাতে উল্টাতে পুরো পা-ুলিপিটাই পড়ে নিলাম, বলা যায় পড়তে বাধ্য হলাম। একটি নতুন ধারণা। বাংলা ভাষায় অনেক পৌরাণিক শব্দ রয়েছে। যা আমরা প্রায়শ ব্যবহার করে থাকি। সে শব্দগুলোর উৎস-কাহিনি সাহিত্যরস সমৃদ্ধ সৌকর্যে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিটা ভুক্তি যেন এক একটা অণুগল্প। একটি পড়লে আর একটি পড়ার আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে। নামটি দেখে পাঠক যাই ধারণা করুন না কেন, পড়ার পর বুঝতে পারবেন লেখক কী যতœসহকারে বাংলা শব্দের উৎপত্তি ও বিকাশ  নানা জানা-অজানা তথ্য দিয়ে গল্পচ্ছলে তুলে ধরেছেন। অনেকগুলো বেশ রোমাঞ্চকর ও আনন্দদায়ক। আমি মনে করি বইটি শুধু বয়স্কদের নয়, শিশু-কিশোরদেরও আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

শব্দের পরিবর্তন কেন এবং কীভাবে হয় তা লেখক প্রায় প্রত্যেকটি ভুক্তিতে যুক্তিসহকারে বর্ণনা করেছেন। মন্তব্যগুলো যেমন আগ্রহোদ্দীপক তেমন ঐতিহাসিক তথ্যে ভরপুর। শুধু ভারতীয় পুরাণ নয়, ল্যাটিন, চীনা, আরবীয়, মিশরীয়, গ্রিক, রোমান, ফারসি, পর্তুগিজ, ইংরেজ, আফ্রিকান এমনকি মার্কিন ও অস্ট্রেলীয় পুরাণেরও এমন অনেক শব্দের উৎস-বিবরণ বইটিতে  দেওয়া হয়েছে যেগুলো আমরা প্রাত্যহিক নানা কাজে হরদম ব্যবহার করি। সে হিসাবে গবেষকদেরও বইটি কাজে লাগবে।

ড. মোহাম্মদ আমীন বাংলা বানান ও বাংলা শব্দ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করছেন। বাংলা বানান নিয়ে তাঁর একাধিক গ্রন্থ আছে। ইতোপূর্বে তার বেশ কয়েকটা বই আমি পড়েছি। এরমধ্যে ‘রঙ্গ রসে বাংলা বানান’ বইটির কথা না-বললেই নয়। এ গ্রন্থে তিনি বাংলা বানানের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও খুঁটিনাট দিক হাস্যরসের অফুরন্ত খোড়াকসহ তুলে ধরেছেন। এ গ্রন্থেও লেখকের সে রসপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। অনেকে বই কিনেন শুধু সংগ্রহের জন্য। তবে ‘বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস’ নিলে ক্রেতা শুধু সংগ্রহ করে সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। দু-একটা ভুক্তি পড়লে পুরোটা পড়ার আগ্রহ জাগবে। আমি মনে করি বইটি বাংলাভাষী প্রত্যেক পাঠকের কাছে একটি আকর্ষণীয় সংগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে। আমি বইটির বহুল প্রচার ও লেখকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।