Sunday, 21 January 2018

শ্রেষ্ঠ বই শ্রেষ্ঠ কাহিনি শ্রেষ্ঠ মূল্যবোধ / প্রমিতা দাস লাবণী

ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা মুগ্ধকর কয়েকটি বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়াহলো। বইগুলি পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয় ও শিখা প্রকাশনীর স্টলে এবং শোভা প্রকাশ এর প্যাভিলিয়নে।এবারের গ্রন্থমেলায় এই বইগুলি যে কোনো বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে পাঠকের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হবে।
১. অর্হণা
স্যমন্তক সিরিজের দ্বিতীয় উপন্যাস অর্হণার পাণ্ডুলিপি পড়তে পড়তে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম বিংশ শতকের সত্তরের
 দশকে। এমন অলৌকিক কা- যে উপন্যাস ঘটাতে পারে, সেটি কত আকর্ষণীয় এবং আত্মহরি হতে পারে তা সহজে
অনুমেয়। ঘটনা, খ্যাতিমান চরিত্রবর্গ, চরিত্রসমূহের সরব উপস্থিতি, রাজসিক আলোচনায় সর্বজনীন হিত, সাড়ম্বর দৃশ্যপট, দৃশ্যপটের মনোহর নৈসর্গিকতায় শহুরে বিমোহন, দলিতদের প্রতি মমতা, অতি স্পর্শকাতর কিছু সম্পর্ক, হৃদয় আলোড়িত জ্ঞানগর্ভ কথোপকথন, বুদ্ধিমত্তার অপূর্ব নিদর্শনপ্রসূত দার্শনিক উপলব্ধি, মনোবৃত্তিক উদারতায় হৃদয়ভিত্তিক জটিলতার স্বরূপ, প্রেম-ভালোবাসার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিউরে তোলা পরিঘটনার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ আমাকে প্রবলভাবে মুগ্ধ করেছে। অর্হণা যিনিই পড়ুন, মুগ্ধ হবেন, অভিভূত হবেন সোল্লাস প্রাপ্তির মাদকীয় ভাবনায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রায় পুরো পৃথিবী এই উপন্যাসের ক্ষেত্র। উভয় বাংলার কালজয়ী কবিসাহিত্যিকগণ এই উপন্যাসের মূল চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের নামকরা কয়েকজন পণ্ডিত। উপন্যাসটি কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, ভাষা মানুষকে এখনো এমন হাতিয়ার দিতে পারেনি, যদ্দ্বারা মানুষ তার সব উপলব্ধিকে কেবল বাক্য-ভাষায় অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তেমনি
ড. মোহাম্মদ আমীন ও হায়াৎ মামুদ
অর্হণার পা-ুলিপি পড়ে আমার অনুভবে সঞ্চারিত আবেশরাশিকে সম্পূর্ণরূপে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। শুধু বলব, অর্হণা অসাধারণ হৃদয়কাড়া একটি উপন্যাস। তাই ‘বইটি কেমন’ প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, এর অবিকল উত্তর পেতে হলে ‘অর্হণা’ পড়তে হবে। অর্হণা শুধু উপন্যাস নয়, পাঠকের তীর্থভূমি। ‘অর্হণা’রূপ উপন্যাসের তীর্থক্ষেত্র থেকে আপনি পেতে পারেন সাহিত্যের নির্ঝর সমৃদ্ধি, বিমল মুগ্ধতা। পরিচিত হতে পারেন বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে। বইটি পড়লে পাঠক সত্যিকার উপহার ও ঐশ্বর্য্যময় সম্পদে বিভূষিত হওয়ার মোহনায়-স্নাত হওয়ার সুযোগ পাবে।

২. তিনে দুয়ে দশ 
ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়। ভালোবাসা দিয়ে যে কোনো কঠিন হৃদয়কেও বিগলিত করে ফেলা যায়। ভালোবাসা পেলে যে কোনো দুষ্টমতি শিশুও সুবোধ হয়ে যায় সপ্রাণ চঞ্চলতায়। ভালোবাসা দিয়ে অতি অবাধ্য এবং লেখাপড়ায় প্রচ- অমনোযোগী শিক্ষার্থীর ইচ্ছাকেও প্রতিভায় প্রতিভায় বিকশিত করে তোলা যায়। ভালোবাসায় বারিত
করা গেলে অতি বর্বর ব্যক্তিও আদর্শ মানুষে পরিণত হয়। মূলত  এগুলিই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু। মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, প্রবীণ, সর্ব পর্যায়ের অগ্রজ, বস, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সিনিয়র প্রমুখ-সহ যে কোনো গুরুজন, বন্ধু, সহপাঠি, প্রিয়জন ও ভালোবাসার মানুষকে যদি এমন কোনো বিশেষ উপহার দিতে চান, যে উপহার পেলে তিনি খুশি হবেন এবং উপহার দাতার প্রতি তার প্রেম-ভালোবাসা, মায়ামমতা, দয়া-দরদ, স্নেহ-প্রীতি, হার্দিক নৈকট্য, সহানুভূতি, ধৈর্য ও বিবেচনাবোধ বেড়ে যাবে; তাহলে, তাকে ‘তিনে দুয়ে দশ’ উপন্যাস উপহার প্রদানই হবে সবচেয়ে উত্তম এবং কার্যকর। এটি হতে পারে যে কোনো দিবসে যে কোনো অনুষ্ঠানে যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের প্রিয়জনকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। বেউ যদি একটি উপন্যাস পড়ে তার শিশু বা জুনিয়রদের নিজের ইচ্ছেমতো গড়ে তোলার কার্যকর কৌশল আয়ত্ত করতে চান তাহলেও বইটি পড়া অপরিহার্য।। এটি এমন একটি বই, যার সারাংশ ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর বোদ্ধামহলে বিপুল সাড়া পড়ে গিয়েছিল। ভাইরাল আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এর ব্যতিক্রমতার কাহিনি। এটি একটি সর্বজনীন উপন্যাস। বইটি প্রত্যেকের হৃদয়কে নাড়া দিতে সক্ষম হবে। বইটি পড়লে হ্রাস পাবে অস্থিরতা, অধৈর্য এবং মানসিক বিপর্যয়। বইটির অন্তর্নিহিত শিক্ষা লালন করা গেলে যে কেউ অতি উচ্ছৃঙ্খল শিশুসন্তানকেও মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে।

৩. বিচিন্ত কথন গ্রন্থের ফ্ল্যাপ
বিচিন্ত কথন, অভিজ্ঞতা-অর্জিত ও জীবনঘনিষ্ট এবং প্রাঞ্জল বর্ণনায় পরিবেশিত একটি মুগ্ধকর প্রবন্ধসংগ্রহ। প্রবন্ধ
সাধারণত গভীর চিন্তার জটিল প্রকাশ। কিন্তু এই বইয়ের প্রবন্ধগুলি পড়লে অনুধাবন করা যায়, জটিল চিন্তাগুলিও কত মনলোভা লাস্যে এবং আকর্ষণীয় ভাষ্যে পরিবেশন করা যায়। পড়লে পাঠকের মনেই হবে না যে, প্রবন্ধ পড়া হচ্ছে। মনে হবে, ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশিত একটি উপন্যাস। এই হিসেবে বলা যায়, বিচিন্ত কথন আধুনিক প্রবন্ধ সাহিত্যের একটি নতুন ধারণা। অনেকে মনে করেন,  প্রবন্ধ কঠিন হয়ে থাকে। ফলে প্রবন্ধের ভারী কথাগুলি আরো ভারী হয়ে সাধারণ পাঠককে প্রবন্ধবিমুখ করে তোলে। কিন্তু বিচন্ত কথন এমন একটি প্রবন্ধসংগ্রহ, যার প্রতিটি প্রবন্ধ গল্পের মতো সুখপাঠ্য, নাটকের মতো রুদ্ধশ^াসীয় এবং গল্পের মতো আকর্ষণীয় কারুকার্যে বিন্যস্ত। প্রতিটি প্রবন্ধের প্রতিটি বাক্য নতুনভাবে উজ্জীবিত করার মতো দার্শনিক ঋদ্ধতায় পূর্ণ। প্রবন্ধ কত সরস, হৃদয়গ্রাহী, প্রাঞ্জল এবং  পাঠসুখকর হতে পারে তা জানতে হলে বইটি পড়া আবশ্যক। এর প্রত্যেকটি লাইনকে পাঠক নিজের জীবনের সঙ্গে সহজে মিলিয়ে নিতে পারেন। গ্রহণ করতে পারেন অভিজ্ঞতার সারবত্তা হিসেবে আত্মচেতনার নান্দনিক পরিস্ফুটনে। এটি এমন একটি বই, যা প্রাত্যহিক মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির অনুধাবন ভাবনাকে নতুন অঙ্গিকে কুসুমিত করে তুলবে। বইয়ের প্রবন্ধগুলি এতই প্রাঞ্জল এবং হৃদয়গ্রাহী যে, পুরো বই না পড়ে উঠা যায় না। নতুন চিন্তা জাগ্রত এবং মনোভাবকে বিকশিত করার জন্য বিচন্ত কথন বইটি যে কারো সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবে।

৪. বড়ো হুজুর ও বরুমতির মেলা
শিশুকিশোর হতে যুবক-যুবতী এবং পরিণত বয়স্ক - এককথায় সবার উপযোগী এই উপন্যাসটি একদিকে যেমন হৃদয় বিদারক  অন্যদিকে তেমনি প্রত্যশার বিরল স্নিগ্ধতা আর ভালোবাসা ও কাঠিন্যের বৈচিত্র্যময় উপমায় ভরপুর এক অতুলনীয় কিশোর উপন্যাস। বড়ো হুজুর, বরুমতি এবং বড়ো হুজুরের শিশু নাতিকে নিয়ে উপন্যাসটি রচিত।
বরুমতি  কোনো মেয়ে নয়। একটি  খাল। বরুমতির তীরে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে একদিনের জন্য হিন্দুদের মেলা বসত।  অনেক শিশুকিশোর  বরুমতির মেলায় যেত।  কিন্তু বড়ো হুজুর তার নাতিকে যেতে দিতেন না। ঘরে আটকে রাখতেন। বড়ো হুজুর তার শিশু নাতির মেলায় যাওয়া রোধ করার জন্য কত নৃশংস হয়ে উঠতেন এবং কী জঘন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেন, অপরদিকে শিশুটি মেলায় যাওয়ার জন্য কী করতেন তার শোকাবহ ভাষাচিত্র বইটির মূল বিষয়বস্তু। এত গোঁড়া হওয়া সত্ত্বেও বড়ো হুজুর কত দেশপ্রেমিক এবং কীরূপ সমাজ সচেতন ছিলেন সেই বিষয়টিও উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে।  উপন্যাসটি তৎকালীন ধর্মীয় গোঁড়ামির নির্যাতনে পিষ্ঠ এক অসহায় শিশুর জীবনচরিতের একটি করুণ চিত্র। যে কারুণ্য আবার নির্যাতনকারীর স্নেহপরশে অমিয় হয়ে উঠত হার্দিক মমতার পারিবারিক পরশে।  এটি শুধু উপন্যাস নয়, যেন কালের পরিক্রমায় চলে আসা একটি জীবন্ত জীবনবন্দনা। যার গুরুত্ব ইতিহাসের চেয়েও অধিক। বইটি আপনার সংগ্রহকে করবে সমৃদ্ধ এবং চিন্তাকে করবে ঋদ্ধ।

৫. ওরা এগারো জন
‘ওরা এগারো জন’ এমন একটি গ্রন্থ যে গ্রন্থে কবি-সাহিত্যিক হিসেবে স্বল্পপরিচিত কিন্তু প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী
এবং অনবদ্য সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী এগারো জন প্রতিভাধর ব্যক্তির সাহিত্যকর্ম, জীবনাচরণ, আদর্শ ও মূল্যবোধ-সহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থে যাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাঁরা  খুব প্রসিদ্ধ কেউ নন। তবে অখ্যাতও নন। খুব বিখ্যাত না-হলেও তাঁরা প্রত্যেকে আপন কর্মপরিম-লে বিদগ্ধ, স্নিগ্ধ, বিকশিত এবং নন্দিত। এই গ্রন্থে তাঁদের সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম এবং জীবনদর্শন চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এগারো জনের স্বার্থহীন উদার মননশীলতার কাব্যিক বর্ণন পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে। তাদের মনে এই অনুভবের সৃষ্টি করতে পারে যে, স্বল্প খ্যাত এসব ব্যক্তিবর্গ নিয়ে কিছু লেখা উচিত। যাতে তাঁরা উৎসাহিত হন, তাঁদের সৃজনশীল ক্ষেত্র বিকশিত হওয়ার পথ সুগম হয় এবং আরো অনেকে এমন কাজে এগিয়ে আসেন। গ্রন্থটি  এমন উদ্দেশ্য ও ধারণা বিবেচনায় রচিত প্রথম প্রয়াস। ব্যতিক্রমী এই গ্রন্থটি পাঠকের মনে এনে দিতে পারে নতুন পরিম-লে অবগাহন করার বিরল অনুভূতি।

৬. ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা
বইয়ের চেয়ে উত্তম উপহার এবং ভালোবাসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ আর নেই। আর এই দুটির সমন্বয় যদি ঘটানো যায় তাহলে যে কারো জীবন হয়ে ওঠে মধুর এবং ভালোবাসাময়। জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গীয় প্রাপ্তির চেয়ে আরো বিরল প্রত্যাশিত সুখের অনন্ত উৎস। প্রিয়জন প্রত্যেকের  আছে, প্রত্যেকে চায় তার প্রিয়জন শ্রেষ্ঠ হোক কিন্তু নানা কারণে হয় না; করা যায় না। কিন্তু কেন করা যায় না এবং কীভাবে প্রিয়জনকে প্রত্যাশিত লক্ষ্যে উপনীত করা যায় এবং  এতে ভালোবাসার ভূমিকাই বা কী তা এই গল্পগ্রন্থের মূল আলেখ্য। প্রত্যেকের চাওয়া-পাওয়া এবং রুচি বা ইচ্ছা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন। কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে এবং বস্তু হিসেবে বইয়ের ক্ষেত্রে সবার ইচ্ছা অভিন্ন। ভালোবাসা পেলে যে ব্যক্তি খুশি হয় না সে পশুও নয়, জড়; মরা লাশ। বই পেয়ে যে আপ্লুত হয় না, সে লাশের চেয়েও বিরক্তিকর। তবে বই হতে হবে প্রিয়জনের মনকে নাড়া দেওয়ার মতো। ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা এমন একটি বই। এটি যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো পর্যায়ের প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া যায়। এটি এমন একটি বই যা প্রিয়জনকে দিলে আপনার প্রতি শুধু ভালোবাসা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতার  নিবিড় আবেশে বেড়ে যাবে পারস্পরিক প্রীতি। ভালোবাসার মূল্য কী এবং কীভাবে, কোথায় কাকে ভালোবাস দিতে  হয় এবং কীভাবে তা স্থায়ী করা যায়- তা এই গল্পগ্রন্থের পাত্রপাত্রীদের আচরণ, কথোপকথন এবং কাহিনি বিন্যাসে মেলে ধরা হয়েছে। জীবন ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে অর্জিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সহজ-সরল ভাষায় পরিবেশিত বইদুটি হতে পারে ভালোবাসা দিবস-সহ যে কোনো দিবসে যে কোনো অনুষ্ঠানে যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের  প্রিয়জনকে দেওয়া আপনার শ্রেষ্ঠ উপহার।


৭. গুরমিত রাম রহিম সিং ও ভারতীয় ধর্মগুরুদের কীর্তিকলাপ
ভারতে ধর্মগুরুদের নিয়ে অসংখ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। তবু কেন ধর্মগুরুদের প্রতি সাধারণ মানুষের
প্রবল বিশ্বাস ও আস্থা কমে না বরং বেড়ে যায় তা এই গ্রন্থের মূখ্য আলোচনা। গুরুমিত রাম রহিম সিং বাস্তবতা, কল্পনা, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা, কুশলী অবস্থান, রহস্যময়তা, প্রতিভা প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত এক অনবদ্য আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু। হরিয়ানা-পাঞ্জাবে অন্তত ৫ লাখ সরাসরি ভক্ত আছে গুরমিত রাম রহিমের। যারা তাঁকে তাদের জীবনের চেয়ে বেশি আপন জানেন, তাঁর জন্য জীবন দিতে পারেন অবলীলায়। সারা বিশ্বে গুরমিত রাম রহিমের ছয় কোটি ভক্ত রয়েছে। এসব ভক্ত রাম রহিমের প্রতি এতই বিশ্বস্ত যে, তারা গুরমিতকে ঈশ্বরের দূত বলে বিশ্বাস করেন। কিন্তু কেন? এটাও বইটিতে বর্ণিত হয়েছে। রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে খুন-ধর্ষণসহ অনেকগুলি অভিযোগ, অভিযোগের কারণ, স্বরূপ, অভিযোগের সত্যতা, প্রদত্ত শাস্তি এবং এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না প্রভৃতি এই গ্রন্থে নানা তথ্যপ্রমাণসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করা হয়েছে। গুরুমিত ছাড়াও ভারতীয় আরো কয়েকজন ধর্মগুরুর কীর্তিকলাপ সম্পর্কে গ্রন্থটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। এরা হলেন :  আনন্দ মূর্তি আশারাম বাপু আশুতোষ মহারাজ, বাবা পরমানন্দ, রাধে মা, সচ্চিদানন্দ গিরি, রামবৃক্ষ যাদব, চন্দ্রস্বামী, স্বামী ওমজি, সারথি বাবা, লাল সাই, গুলজার পির, নির্মল বাবা, ইচ্ছাধারী ভীমানন্দ, নারায়ণ সাঁই, রামপাল, বৃহস্পতি গিরি, স্বামী গঙ্গেশানন্দ, স্বামী নিত্যানন্দ, স্বামী অসীমানন্দ, প্রেমানন্দ স্বামী, ভীমানন্দজি, মহারাজ স্বামী স্বদাচারী প্রমুখ। বইটি পড়লে গুরমিতের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের স্বরূপ এবং তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পাঠক নতুন অভিজ্ঞানে ঋদ্ধ হবেন। গুরমিত রাম রহিম সিং এবং ভারতীয় ধর্মগুরুদের স্বরূপ এবং এর ঐতিহাসিক ইতিবৃত্ত জানার জন্য বইটি প্রত্যেকের পড়া উচিত। 

৮. চর্যাপদের উৎসভূমি
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এই চর্যাপদ  কোথায় বা কোনস্থানে রচিত হয়েছে, তা এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু। বাংলা ছাড়াও আরো কয়েকটি ভাষাভাষী চর্যাকে নিজেদের ভাষার নিদর্শন বলে দাবি করেছেন। হিন্দিভাষীরাও চর্যাকে তাদের ভাষার নিদর্শন দাবি করেন। চর্যাপদকে একাধিক ভাষাভাষী নিজেদের ভাষার নিদর্শন
দাবি করলেও চর্যা যে, বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন, এ দাবি নস্যাৎ হয়ে যায় না। বরং চর্যার গুরুত্ব, গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য আরো বৃদ্ধি পায়। লেখক এই গ্রন্থে এসব দাবি-বিতর্কে না গিয়ে নতুন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে একটি নতুন বিষয়ের অবতারণা করেছেন। সেটি হচ্ছে, চর্যাগুলি কোথায় লিখিত হয়েছে? তৎকালীন রাজনীতিক কর্মকা-, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, ধর্মীয় প্রেক্ষাপট, সাহিত্যচর্চার প্রকৃতি, তৎসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে উপাত্ত ও ঘটনার পরম্পরা বিশ্লেষণ করে যুক্তি সহকারে উল্লেখ করেছেন যে, সে সময় চর্যা-রচনার অনুকূল স্থান ছিল কেবল চট্টগ্রাম। তখন চট্টগ্রাম বাংলাদেশের হিন্দু শাসনের আওতাভুক্ত ছিল না। সে হিসেবে বিবেচনায় লেখক বলেছেন, চর্যাপদ চট্টগ্রামেমে রচিত হয়েছে। এই গবেষণামূলক গ্রন্থটিতে চর্যার উৎসভূমি হিসেবে চট্টগ্রামকে নির্দেশ করে লেখক যে ধারণা দিয়েছেন, তা পাঠকের মনে নতুন কৌতুহল সৃষ্টি করবে।

৯. নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক (১৯০-২০১৭)
এটি একটি গবেষণামূলক এবং তথ্যবহুল অতি প্রয়োজনীয় একটি জীবনীগ্রন্থ। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
যে সব ব্যক্তি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, তাদের জীবনী, সাহিত্যকর্ম, জীবনের বৈচিত্র্যময় ঘটনাপ্রবাহ, উত্থানপতনের বিবরণ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ের নানা বৈচিত্র্যময় তথ্য, পারিবারিক জীবন, সাহিত্যকর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ছবি সহজ ও সাবলীল ভাষায় প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তসহ তুলে ধরা হয়েছে। একই মলাটে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সকল সাহিত্যিকের জীবনী জানার জন্য বইটি প্রত্যেকের সংগ্রহে থাকা উচিত। বিশেষ করে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএস-সহ যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এটি অতি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। শুধু তাই নয়, গবেষকসহ যে কোনো আগ্রহী পাঠক, যারা নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের সম্পর্কে জানতে চান তাদের সংগ্রহকেও বইটি সমৃদ্ধ করবে। 

১০. বাঙালির বাংলা হাসি
বাংলা বানান, বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা ভাষা নিয়ে লিখিত কৌতুকগ্রন্থের কৌতুকগুলি পড়লে শুধু হাসি নয়, হাসির সঙ্গে বাংলা ভাষা সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞান সৃষ্টি হবে। প্রায় দুইশ ছোটো ছোটো কৌতুক নিয়ে রচিত
এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে কৌতুকের জগতে অনবদ্য একটি সংযোজন হিসেবে অভিহিত হবে। বাংলা সাহিত্যে পুরো বাংলা নিয়ে এমন একক গ্রন্থ ইতোঃপূর্বে রচিত হয়নি।  আপনি কী বাংলা ব্যাকরণ ও বাংলা বানান পড়ে হাসতে হাসতে উদ্বেল হয়ে যেতে চান হাসির মাঝে? আপনি হাসির মাঝে শুদ্ধ বাংলা শিখে নিজেকে বিশুদ্ধ করে তুলতে চান মাতৃভাষার আলয়ে? তাহলে ‘বাঙালির বাংলা হাসি’ বইটি কিনবেন। অসাধারণ এই বইট কৌতুকের রাজ্যে ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে। বইটি পড়লে কী মজা পাবেন, কত হাসি আপনাকে হাসাবে প্রতিটি কৌতুক সে সম্পর্কে এবং কৌতুক কত শিক্ষণীয় হতে পারে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্যও বইটি আপনার পড়া আবশ্যক।

১১. জর্জ ওয়াশিংটন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প
এটি একটি গবেষণামূলক জীবিনী গ্রন্থ। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বর্তমান
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনী ও রাজনীতি এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচন-বির্তক গ্রন্থটির মূল বিষয়বস্তু। আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্ট কেমন ছিলেন, কেমন ছিল তাঁদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন, কীভাবে তাঁরা উঠে এসেছে,  কীভাবে ধাবিত হয়েছে তাঁদের রাজনীতিক চিন্তা প্রভৃতিও নিখুত ভাষায় তুলে আনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টগণের ব্যক্তিক চিন্তা ও দলীয় ভাবনার সম্পর্ক, এর সঙ্গে বিশ^ভাবনার অন্তর্নিহিত রূপ, বিভিন্ন স্বার্থিক মহলের প্রতিক্রিয়াও আলোচনা হতে বাদ যায়নি। সহজ সরল ভাষায় আমেরিকার ৪৫ জন প্রেসিডেন্টের জীবনী নিয়ে পরিবেশিত বইটি পড়লে প্রতিষ্ঠার পর হতে এই পর্যন্ত আমেরিকার রাষ্ট্রনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, বিশ^রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব ও ভূমিকা প্রভৃতির অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে। আমেরিকার প্রেক্ষাপট আলোচনায় অনিবার্যভাবে চলে আসা আর্থরাজনীতিক পর্যালোচনা ও সমরনীতি বইটিকে ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে। বিসিএস-সহ যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার অংশগ্রহণকারী এবং শিক্ষক-গবেষক প্রত্যেকের কাছে বইটি অত্যন্ত মূল্যবান সংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অধিকন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আমেরিকা সম্পর্কে যারা জানতে চান তাঁদের কাছেও অপরিহার্য সহায়কপুস্তক হয়ে থাকবে। একই মলাটে আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টর জীবনী নানা বৈচিত্র্যময় তথ্যসহ জানার জন্য বইটির বিকল্প নেই।

১২. বাংলাদেশের জেলা উপজেলা ও নদনদীর নামকরণের ইতিহাস
বাংলাদেশের সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও নদ-নদীর নামকরণের ইতিবৃত্ত, স্থানসমূহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, এলাকার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের পরিচিতি এবং প্রসিদ্ধ স্থানসমূহের বিবরণ হালনাগাদ প্রাসঙ্গিক তথ্য-সহ একই পুস্তকের একই মলাটে পেতে চাইলে খ্যাতিমান ইতিহাসবেত্তা ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘বাংলাদেশের জেলা উপজেলা ও নদ-নদীর
নামকরণের ইতিহাস’ পুস্তকটি সংগ্রহ করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। কারণ  বাংলাদেশে এমন পূর্ণাঙ্গ বিবরণ সংবলিত কোনো পুস্তক ইতোঃপূর্বে প্রকাশিত হয়নি। উল্লেখ্য, একই লেখকের অন্য একটি  বই ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ‘জেলা উপজেলা ও নদ-নদীর নামকরণের ইতিাহাস’ নামে অন্য একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে বইটি ছিল অসম্পূর্ণ এবং ‘নদ-নদীর নামকরণ’ অংশে কেবল কয়েকটি নদীর বিবরণ ছিল। বেশ কিছু তথ্যবিভ্রাটও ছিল। অনেক পাঠক বইটিকে হালনাগাদ করার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। অধিকন্তু, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নতুন একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যার পরিবর্তন হওয়ায় হালনাগাদ পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের জেলা, উপজেলা, নদ-নদী, বিখ্যাত ব্যক্তির পরিচিতি, প্রসিদ্ধ স্থানসমূহের বিবরণ, জনসংখ্যা এবং প্রাসঙ্গিক যাবতীয় হালনাগাদ তথ্য সন্নিবেশিত করে ‘বাংলাদেশের জেলা উপজেলা ও নদ-নদীর নামকরণের ইতিহাস’ বইটি শোভা প্রকাশনী হতে প্রকাশ করা হলো। 

Sunday, 14 January 2018

ভালোবাসা ও ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপহার / শ্রাবন্তী নাহা অথৈ



বইয়ের চেয়ে উত্তম উপহার এবং ভালোবাসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ আর নেই আর এই দুটির সমন্বয় যদি ঘটানো যায় তাহলে যে কারো জীবন হয়ে ওঠে মধুর এবং ভালোবাসাময় যে জীবনে ভালোবাসা থাকে সে জীবনে সবকিছু পাওয়া হয়ে যায় জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গীয় প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশিত সুখের বিরল উৎস প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া, রুচি-অরুচির ভিন্নতা আছে, আলাদা অনুভূতি আছে, যা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন কিন্তু ভালোবাসা এবং বস্তু হিসেবে বইয়ের ক্ষেত্রে সবার ইচ্ছা অভিন্ন ভালোবাসা পেলে যে খুশি হয় না সে পশুও নয়, জড়; মরা লাশ বই পেয়ে যে আপ্লুত হয় না, সে লাশের চেয়েও অধম তবে বই হতে হবে প্রিয়জনের মনকে নাড়া দেওয়ার মতো অনিন্দ্য আমি এখানে এমন দুটি বই নিয়ে আলোচনা করব, যে বই দুটি আপনার প্রিয়জনকে দিলে এবং আপনার প্রিয়জন আপনাকে দিলে পরস্পরের প্রতি শুধু ভালোবাসা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতার নিবিড় আবেশে নতুন একটা জগৎ সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে বহুগুণ বেড়ে যাবে পরস্পর প্রীতি কারণ বই দুটিতে এমন বিষয় আছে, যা ভালোবাসার মূল্য কী এবং কীভাবে, কোথায় কাকে ভালোবাস দিতে হয় এবং কীভাবে তা স্থায়ী করা যায়- সেটিই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের আচরণে তুলে ধরা হয়েছে

তিনে দুয়ে দশ

তিনে দুয়ে দশ. মোহাম্মদ আমীন স্যারের লেখা একটি উপন্যাস যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো বয়সের সিনিয়র, মুরব্বি, গুরুজন বা বয়স্কদের প্রতি কোনো জুনিয়র বা শিশুকিশোর কোনো উপহার দিতে চাইলেতিনে দুয়ে দশউপন্যাসের চেয়ে আর কোনো ভালো
উপহার হতে পারে না। মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, সব পর্যায়ের অগ্রজ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক শিক্ষিকা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, সিনিয়র নেতা প্রভৃতিসহ যে কোনো মুরব্বি বয়স্ক গুরুজনকে যদি এমন কোনো উপহার দিতে চান, যে উপহার পেলে তিনি খুশি হবেন এবং আপনার প্রতি তার ভালোবাসা, দরদ, মায়ামমতা, স্নেহ, সহানুভূতি, ধৈর্য, বিবেচনাবোধ, সন্তুষ্টি প্রভৃতি বেড়ে যাবে; তাহলে আমি বলব আপনি, তাকে . মোহাম্মদ আমীন স্যারের লেখাতিনে দুয়ে দশউপন্যাসটি উপহার দিন। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়, পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা ভালোবাসা দিয়ে আদায় করা যায় না- এটিই বইটির মূল্য বিষয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত এই বইটি হতে পারে ভালোবাসা দিবস-সহ যে কোনো দিবসে আপনার যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের প্রিয়জনকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার


তিনে দুয়ে দশ একটি অনবদ্য উপন্যাস। অনবদ্য বলার কারণ আছে। এটি শুধু কথার কথা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা হতে লিখিত এই উপন্যাসটি শিশুকিশোর হতে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য উপযোগী এবং দ্রুত মননশীলতার পরিবর্তনের এক যাদুকরি শক্তি রয়েছে। এই উপন্যাসের কাহিনী বিরল ভালোবাসার অনন্ত মহিমা যেন। যা সবার মনে দাগ কাটতে সক্ষম। শিশু-কিশোরদের
মনমানসিকতাকে আদর্শ চেতনায় জাগ্রত করতে হলে বয়স্কদের কী করতে হবে, কেমন হতে হবে তাদের আচরণ, কীভাবে তাদের মূল্য দিতে হবে প্রভৃতি ছাড়াও এই বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক সমাজের কর্তব্য কী, তা অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় অনুপম এক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আবার জ্যেষ্ঠদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং আনুগত্য পেতে হলে অনুজদের কী করতে হবে তাও এই উপন্যাসে বাস্তব ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্ণিত হয়েছে।

লেখকের জীবন থেকে নেওয়া এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়। পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার পুথিনিলয় স্টলে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন। মূলত ভালোবাসা কী, কীভাবে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করা যায়, অতি খারাপকেও ভালো লোকে পরিণত করা যায়, অতি খারাপ ছাত্র বা সন্তানকেও মেধাবী করে দেওয়া যায়; সেটাই এই গ্রন্থে লেখক তার জীবনের একটি ঘটনা দিয়ে উপন্যাসে উপন্যাসে বিধৃত করেছেন। আমি মনে করি, এটি ভালোবাসা দিবসসহ প্রত্যেক দিবসে, বিশেষ করে পিতামাতা মরুব্বিদের প্রতি এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি হতে পারে শ্রেষ্ঠ উপহার


ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা

ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা . মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার আগে এর একটি গল্প ফেসবুকে
প্রকাশিত হয়। গল্পটি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফেসবুক ভাইরাল হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্যার আমাকে বিয়ে করুন নামের গল্পটি দিয়ে অনেকগুলি চ্যানেল ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করে। অর্থনীতির অধ্যাপক সেলসম্যান এবং বউশিরোনামের গল্পটি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার বোদ্ধামহল গল্পের নতুন আস্বাদন পায় যেন। আমি গল্প দুটি পড়ে এতই বিমুগ্ধ হয়ে পড়ি যে, আমি আপনাদের জন্য এই লেখা লিখতে অনুপ্রাণিত হলাম। এই বইয়ের ভালোবাসার গল্পগুলি পড়ে আমার মনে গল্প সম্বন্ধে যে ধারণা ছিল, তা পাল্টে গিয়ে নতুন একটা ধারণা সৃষ্টি করল। গল্প শুধু গল্প নয়। জীবন, জীবনটাই গল্প। আর একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পারলাম, লিখতে জানলে যে কোনো সাধারণ বিষয়ও অসাধারণ হয়ে উঠে। যেমন পরিবেশনার গুণে সাধারণ খাবার হয়ে ওঠে তৃপ্তির চূড়ান্ত অবগাহন। ভালোবাসা কী এবং ভালোবাসা দিয়ে জীবনকে কীভাবে বদলে দেওয়া যায় তা আমি এই বই পড়ে আরো
শ্রাবন্তী নাহা অথৈ
ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। ভালোবাসা জীবনের জন্য অপরিহার্য। যে জীবনে ভালোবাসা নেই সে জীবনে যেন কিছু নেই। এই বইয়ে ভালোবাসার মাধ্যমে জীবনগড়ার প্রতিটি দিক, প্রতিটি ক্ষণ এবং প্রতিটি বিষয় গল্পে গল্পে তুলে আনা হয়েছে। জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখলেও এমন লেখা যায় না, অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নিরীক্ষণ করতে হয় অনুভবের বাস্তবতায়। স্বপ্নকে টেনে নামাতে হয় জীবেনর কানায়। গল্পসমূহ পড়লে বোঝা যায়, লেখক তাই করেছেন এবং ভালোবাসাকে খুব ভালোভাবে প্রেমময় অনুভবে নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। গল্পসমূহের ভাষা এত সহজ এবং শব্দচয়ন এত মনোরম যে, পড়লে মন বিগলিত হয়ে যায়। যে কোনো মন তা যতই কঠিন হোক না কেন, নরম হয়ে যায়। গল্পগুলির ভাষা ভালোবাসার মতোই প্রাঞ্জল। গল্পগুলিতে মুগ্ধতা যেন হৃদয়ের আবেগে তাড়িত হয়ে প্রেমে প্রেমে একাকার হয়ে গেছে। অল্পকথায় অনেক বেশি প্রকাশের ক্ষমতা, ছোটো কথায় ভালোবাসার সাহসী প্রকাশ এত ঋদ্ধ যে, গল্প শেষ না করে কোনোভাবে ছাড়া যায় না। এমন অনুভূতির জন্যই হয়তো বইকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ভালোবাসাকে বলা হয়েছে স্বর্গীয় 

অসাধারণ ২০টি গল্প নিয়ে সজ্জিত এই বইটি পড়লে পাঠক এবং পাঠকের উত্তরসুরী- সবার বিবেক ভালোবাসার মাধুর্যে আনন্দ আর মমতার ঔদার্যে সবার মন বিকশিত হয়ে উঠবে। পরস্পরের প্রতি সৃষ্টি হবে স্নেহপ্রেমপ্রীতি এবং উদার সহানুভূতি। ভালোবাসা দিয়ে কীভাবে একজন দুষ্ট ছেলেকেও কিংবা অবাধ্য বন্ধুকেও নিজের একান্ত ভালোবাসার আনুগত্যে পরিণত করা যায়, তার কৌশল এই বইয়ে বাস্তব গল্পে বিধৃত করা হয়েছে। বইটি পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয়-এর স্টলে।