Wednesday, 14 October 2015

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন _একটি অসাধারণ গ্রন্থ / ড. হায়াৎ মামুদ

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন গ্রন্থ আলোচনা

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা একসঙ্গে দুটোই। মায়ের মুখের বুলি ঠোঁটে নিয়ে জন্মেছি, তাই মাতৃভাষা বাংলা আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে কে, এমন সাধ্য কার আছে? দস্যুগিরি করে কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি সরকার ১৯৫২ সালে, সে-কারণেই দানা বেঁধে
উঠেছিল বাহান্নর ভাষা-আন্দোলন আর ২১শে ফেব্র“য়ারি ছাত্রদের বুকের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল ঢাকা শহরের রাজপথ। রাষ্ট্রভাষার জন্য সংগ্রাম ও সেই যুদ্ধে বাঙালির বিজয়লাভ আমাদের নিজস্ব অর্জন, আমাদের গৌরব ও অহঙ্কার। আমাদের দেশে সামাজিক স্তরে সকল কাজকর্মে মাতৃভাষার ব্যবহার বাঙালির ললাটে রাজটীকা হিসেবে এখন জ্বলজ্বল করছে এবং করতেই থাকবে যতদিন পৃথিবীর বুকে একটি বঙ্গসন্তানও জীবিত থাকবেন। 
কিন্তু এই পরিপ্রেক্ষিত বাস্তব ঘটনা হলেও নিদারুণ অন্য একটি সত্য কোনো রকমেই অস্বীকার করার উপায় নেই, সেটি হল : মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অবহেলা ও ঔদাসীন্য মোটেই কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। এর কারণ, আমরা মাতৃভূমিকে ভালবাসতে ভুলে যাচ্ছি। নিজের জন্মভূমি নিয়ে অহঙ্কার ও আনন্দ না থাকলে মাতৃভাষা নিয়ে কৌতূহল-ভালবাসা-গর্ব-গৌরব কিছুই থাকার তো কথা নয়। সেই অবস্থাই যেন এখন দাঁড়িয়েছে। এর চেয়ে লজ্জার ও দুঃখের আর কিছু কি হয়? এমন কলঙ্কজনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে হলে করণীয় কর্তব্য মাত্র একটিই আছে : নিজের ভাষাকে ভালোমতো জানা। তার অর্থ নির্ভুল বানান, বাক্যের ভিতরে শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগ, বাক্যগঠন যেন শ্র“তিমধুর হয় সেদিকে মনোনিবেশ করা। দেশের ভিতরে দেশবাসী সকল সন্তানই মাতৃভাষাতেই কথা বলে, মায়ের মুখের বুলি শুনতে শুনতেই সে মাতৃভাষাকে রপ্ত করে নেয়, পড়তে-লিখতে না জানলেও মাতৃভাষা বলতে তার কোনো অসুবিধেই হয় না। মাতৃভাষা বলতে সে কোনো ভুল করছে না, শব্দের উচ্চারণ নির্ভুলভাবে বলছে এমনও হয়তো নয়। কিন্তু যে শুনছে তার বুঝতে কোনো ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে না; এর কারণ আমরা কথা বলার সময় মাথার নাড়াচাড়া, হাতের ভঙ্গি, চোখের চাহনি ইত্যাদি দিয়ে মুখের বলাটাকে বাস্তবতায় রূপ দিই। গালগল্প করার সময়ে কি কথা বলার সময়ে আমরা সব সময়ে পুরো বাক্য যে বলি এমনও হয়তো নয়, কিন্তু সে-ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় দেহের বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। 
কিন্তু যখন আমার সামনে কেউ নেই, মুখে কাউকে কিছু বলছি না, কিছু লিখতে হচ্ছে কাউকে পড়াবার জন্যে, তখন লেখাটিকে তো শুদ্ধ করতে হবে, নইলে আমার বক্তব্য সে বুঝবে কী করে। বাধা/বাঁধা, করা/কড়া, কুল/কূল, কোণ/কোন, দিন/দীন, পক্ষ/পক্ষ্ম, পরা/পড়া, পাণি/পানি, পার/পাড়, বিনা/বীণা, মাষ/মাস এবং এ ধরনের আরো বহু শব্দ আছে যেগুলো শুনতে অবিকল এক, অথচ লিখতে গেলে বর্ণের পার্থক্যে অর্থ পাল্টে যায় আকাশ-পাতাল। এসব কারণেই বানান নির্ভুল হওয়া একান্তই প্রয়োজন। 
বানানের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সমাধান পেতে পারি অভিধান দেখলে। বানানে যেখানেই খট্কা লাগছে তখনই অভিধান খুললেই সব সমাধান। কিন্তু তেমন আমরা বড়ো একটা করি না। কারণ হল আলস্য। আলসেমি করে, কুড়েমি করে অভিধানের কাছে আর যাই না। তাহলে কী করে চলবে? পড়াশোনার ব্যাপারে একটুখানি পরিশ্রম অন্তত করতে হবে বৈকি। 
‘বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন’ বইটি আলসে পাঠকের ভয় ভাঙানোর জন্যেই তৈরি করা হয়েছে। ড. মোহাম্মদ আমীন এত খেটেখুটে আপনার জন্য বইটি লিখলেন, গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রকাশক সে-বই মুদ্রিত করে সকলের চোখের সামনে এনেও দিলেন, অথচ আপনি একবার উল্টেপাল্টে দেখবেনও না? তাও কি হয়!
দেখলে কিন্তু মজাই লাগবে। আর কিঞ্চিৎ উপকার যে না পাবেন তাও তো নয়। বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি গ্রন্থ। এমন একটি অসাধারণ গ্রন্থ লেখার জন্য ডক্টর আমীনকে সাধুবাদ। সকলের কল্যাণ হোক।


Thursday, 17 September 2015

দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি অসাধারণ গ্রন্থ / হায়াৎ মামুদ

 দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান

মাতৃভাষা মায়ের মতো নির্ঝর ভালবাসায় নিবিড় এবং জীবনের মতো মায়াময় চিরন্তনতায় গভীর ও অনিবার্য এক প্রত্যয়। এর প্রমুগ্ধ  সোহাগের অনুপম বন্দনা মানুষের উৎকৃষ্ট প্রকাশ-মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের কাছে মাতৃভাষা অতি পবিত্র। জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মাতৃভাষা আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা আর সাংস্কৃতিক
জীবনের মূল্যবোধকে কথামৃতের মৃণ্ময় মাধুর্য্যে উচ্ছ্বল করে রাখে। মাতৃভাষা জীবনবোধের চিরন্তন অনুভূতিকে মায়ের লালিত্যে প্রকৃতির মতো বিস্তৃত স্নেহ আর আকাশের মতো চঞ্চল কলহাস্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনায় বাঙ্ময় করে তোলে। এজন্য একজন আদর্শ মানুষের কাছে অন্য যেকোনো ভাষার চেয়ে নিজের মাতৃভাষা পরম পবিত্র আমানত হিসাবে স্বীকৃত। এ আমানতকে যে জাতি যত মর্যাদার সঙ্গে বরণ করতে পারে, সে জাতি তত মর্যাদাবান হওয়ার উপাদানে বিভূষিত হয়।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাঙালি জাতি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। জীবন দিয়েছে অকাতরে। এ ভাষার সূত্র ধরে আমরা পেয়েছি স্বাধীন জাতি এবং অখ- ভূমি। এখন প্রাত্যহিক কর্মকা-ে প্রমিত বাংলা প্রয়োগে আমাদের অজ্ঞতা, অবহেলা ও যথেচ্ছাচার সে পরম ত্যাগকে রীতিমতো হাস্যকর করে তোলেছে। যে জাতি ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে, সে জাতি ভাষাকে শুদ্ধভাবে আয়ত্ত্ব করার জন্য সামান্য শ্রম দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছে - এমন আত্মপ্রবঞ্চক আচরণ পৃথিবীর আর কোনো জাতির মধ্যে লক্ষ করা যায় না।

শুদ্ধতা ভাষার প্রাণ এবং প্রমিত প্রয়োগ তার দেহাবয়ব স্বরূপ। একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। তাই একটি সজীব ভাষার জন্য শুদ্ধতা, আদর্শমান ও প্রমিত প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। শুদ্ধতা ও আদর্শমান বজায় রাখা ছাড়া মাতৃভাষার সজীবতা ও মর্যাদা রক্ষার অন্য কোনো উপায় নেই। ব্যক্তি  মাতৃভাষার মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তিকে যত স্বাচ্ছন্দ্যে নিবেদন করতে পারে, তা অন্যকোনো ভাষা দিয়ে সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেকের কাছে মাতৃভাষা তার নিজের অস্তিত্বের অলঙ্ঘনীয় স্মারক।

শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের মধ্যে যে পার্থক্য, শুদ্ধ আর অশুদ্ধের মধ্যেও সে পার্থক্য। যিনি মাতৃভাষার শুদ্ধতায় অমনোযোগী, তিনি যেন নিজের মায়ের প্রতি অমনোযোগী। যিনি মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা করেন, তিনি যেন মায়ের প্রতি অবহেলা করেন। মাতৃভাষার প্রতি স্বেচ্ছাচার নিজের মায়ের প্রতি স্বেচ্ছাচারের নামান্তর। এমন কুপুত্র কখনও কী আদর্শ হতে পারে? যে জাতি এমন কুপুত্র ধারণ করে সে জাতি কখনও আদর্শ জাতি হতে পারে না। ভাষাপ্রেম দেশপ্রেমের অন্যতম পূর্বশর্ত। যা আমরা ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রমাণ করেছি। কিন্তু এখন?

ইদানীং বাঙালি জীবনের প্রাত্যহিক কর্মকা-ে মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এমনকি উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের দ্বারা বিন্যস্ত দাপ্তরিক কর্মকা-েও বাংলা ভাষার প্রমিত প্রয়োগে লজ্জাকর অবহেলা, অসহনীয় স্বেচ্ছাচারিতা এবং অবিশ্বাস্য অজ্ঞতা লক্ষণীয়। এমন আচরণ জাতীয় জীবনের মূল উৎসধার হিসাবে চিহ্নিত সাংস্কৃতিক পরিম-লের বিহ্বল নান্দনিকতায় কুঠারাঘাত বললেও অত্যুক্তি হয় না। এটি শুধু লজ্জা নয়, বলা যায় আমাদের চরম লজ্জা।

এমন লজ্জা হতে উত্তরণের প্রয়াস হিসাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দাপ্তরিক কর্মকা-ে প্রমিত বাংলার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান বিধিার আলোকে বিবিধ নির্দেশনা প্রদান করেছে। এ নির্দেশনার আলোকে ড. মোহাম্মদ আমীন দীর্ঘ গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞানের সঙ্গে প্রায়োগিক অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে ‘দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান’ গ্রন্থটি রচনা করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি নানা দপ্তরে প্রমিত বাংলা প্রয়োগে যে সীমাবদ্ধতা দেখা যায়, তা দূরীভূত করার জন্য এ গ্রন্থটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এমন একটি সময়োপযোগী গ্রন্থ রচনার জন্য সুহৃদ ড. মোহাম্মদ আমীনকে ধন্যবাদ জানাই। আমি গ্রন্থটির বহুলপ্রচার কামনা করি।

Tuesday, 15 September 2015

বাংলা সাহিত্যে পুলিশের ভূমিকা / ড. মোহাম্মদ আমীন

পুলিশ বিভাগে কর্মরত যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সাহিত্যকর্ম বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে বাংলা সাহিত্যের প্রচার-প্রসারে অবদান রেখেছেন তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু। তাই এটি শুধু জীবনীগ্রন্থ নয়, গবেষণাগ্রন্থও বটে। এমন কয়েকজন ব্যক্তির কর্মকাণ্ড এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যারা প্রত্যক্ষভাবে পুলিশ বিভাগের সদস্য না-হলেও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। পুলিশ না-হলেও যারা পুলিশ বিভাগের কাজ করেছেন তেমন সাহিত্যিক কারণিকদের জীবনীও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  সূচিসজ্জা বাংলা বর্ণমালার বিন্যাস অনুসারে সজ্জিত করা হলেও আভিধানিক ক্রমতা রক্ষা না-করে জন্ম তারিখ অনুসারে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের বিকাশে প্রথম থেকে পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যবৃন্দ অবদান রেখে আসছেন। তবে তথ্য-ঘাটতির জন্য অনেকের নাম এ খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
আজিমদ্দিন মহাম্মদ চৌধুরী (১৭৫১-১৮৩৭)
অদ্বৈতচরণ আঢ্য (১৮১৩-১৮৭৩)
অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯)
আবুল হাসনাৎ (১৯০৫-
আবদুল হাফিজ (১৯০৭-১৯৯৪)

আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩)
আবুল কালাম মকবুল আহমেদ (১৯২৯-১৯৯১)
আবদুর রকিব খন্দকার (১৯৩৩ - ২০১০ )
আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন (১৯৩৪- ২০০২)
আহমেদ আমিন চৌধুরী (১৯৫০-)

আনোয়ার হোসেন, মো: (১৯৫৪-)
আব্দুর রশিদ, মো: (১৯৬৫-)
আদিল মিয়া (১৯৮৬-)
আশরাফুল হক
ইয়াছিন খান(১৯৭৮-)

উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস (১৯৪১-)
এম এ হক (১৯১৯-১৯৯৬)
এম এনামুল হক (১৯৩৮-)
এস জাকির হোসেইন
এস আবদুল হাকিম (১৯৪৭-)

এ কে এম শহিদুল হক
ওয়াহিদুজ্জামান, মো:
কাজী রফিজ উদ্দিন
কাজী আনোয়ারুল হক (১৯০৯-২০০১)
খন্দকার আবু তালিব (১৯১৩-১৯৭৯)

খন্দকার শামসুদ্দোহা (১৯৫৩-)
খান শরিফুল ইসলাম (১৯৮০-)
গিরিশচন্দ্র বসু (১৮২৪-১৮৯৮)
গোলাম মঈন উদ্দিন খান
গাজীউর রহমান

জরাসন্ধ, চারুচন্দ্র চক্রবর্তী (১৯০২-১৯৮১)
জাহাঙ্গীর আলম  চৌধুরী
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস (১৮৭২-১৯৩৯)
 ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৪৭-১৯১৯)
দেবদাস কর্মকার (১৯৫৭-)

দুখু বাঙাল(১৯৫৭-)
 দেবদাস ভট্টাচার্য (১৯৬৮-)
ধীরাজ ভট্টাচার্য (১৯০৫-১৯৩২)
নন্দলাল সেন (১৮৫৬-১৯৩২)
নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা স(১৯৫৬-)

নজরুল ইসলাম, ড.
নূরুল মোমেন অসীম (১৯৭৩-)
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৫৫-১৯০৭)
পঞ্চানন ঘোষাল (১৯০৭-১৯৯০)
ফয়জুর রহমান আহমেদ (১৯২১-১৯৭১)

ফিরোজ খান
বেদুইন শমসের (১৯১৯-১৯৬৪)
বেদুঈন সামাদ (১৯২৬-২০০১)
ভানুলাল দাস (১৯৬০-)
মাহমুদ হায়দার (১৯১৮-)
মোজাহারুল ইসলাম (১৯২২-)
এম এ খালেক চৌধুরী (১৯২৭-)
মাসুদুল হক  (১৯৪৮-)
মোহাম্মদ আবদুল খালেক বিশ্বাস (১৯৫৬-)
মোহাম্মদ আলী (১৯৫৬-)

মতিউর রহমান (১৯৬০-)
 মোশাররফ হোসেন ভূঁঞা (১৯৬০-)
মোহাম্মদ আলী (ইন্সপেক্টর) (১৯৬৩-)
মিজান মিলকী
মোশতাক আহমেদ (১৯৭৫-)

রায়হান শহিদ (১৯৮৬-)
শাহানা ফেরদৌস (১৯৫১-)
শিকদার আবদুস সালাম (১৯৬০-)
শেখ আহ্‌সান উল্লাহ (১৯৮১-)
সৈয়দ এমদাদ আলী (১৮৭৫-১৯৫৬)

সা’দত আলী আখন্দ (১৮৯৯-১৯৭১)
সেকান্দর আলী, মো: (১৯২১-)
সফিউল ইসলাম, মো: (১৯৪৬-)
সুদীপ চক্রবর্তী (১৯৭৫-)
সুমন জিয়াউর রহমান
হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী (১৯০৬-১৯৬৬)

Saturday, 1 August 2015

বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস অনবদ্য একটি গ্রন্থ / হায়াৎ মামুদ





বইয়ের নাম ‘বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস’। নাম দেখে আগ্রহটা বেড়ে গেল। পাতা উল্টাতে উল্টাতে পুরো পা-ুলিপিটাই পড়ে নিলাম, বলা যায় পড়তে বাধ্য হলাম। একটি নতুন ধারণা। বাংলা ভাষায় অনেক পৌরাণিক শব্দ রয়েছে। যা আমরা প্রায়শ ব্যবহার করে থাকি। সে শব্দগুলোর উৎস-কাহিনি সাহিত্যরস সমৃদ্ধ সৌকর্যে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিটা ভুক্তি যেন এক একটা অণুগল্প। একটি পড়লে আর একটি পড়ার আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে। নামটি দেখে পাঠক যাই ধারণা করুন না কেন, পড়ার পর বুঝতে পারবেন লেখক কী যতœসহকারে বাংলা শব্দের উৎপত্তি ও বিকাশ  নানা জানা-অজানা তথ্য দিয়ে গল্পচ্ছলে তুলে ধরেছেন। অনেকগুলো বেশ রোমাঞ্চকর ও আনন্দদায়ক। আমি মনে করি বইটি শুধু বয়স্কদের নয়, শিশু-কিশোরদেরও আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

শব্দের পরিবর্তন কেন এবং কীভাবে হয় তা লেখক প্রায় প্রত্যেকটি ভুক্তিতে যুক্তিসহকারে বর্ণনা করেছেন। মন্তব্যগুলো যেমন আগ্রহোদ্দীপক তেমন ঐতিহাসিক তথ্যে ভরপুর। শুধু ভারতীয় পুরাণ নয়, ল্যাটিন, চীনা, আরবীয়, মিশরীয়, গ্রিক, রোমান, ফারসি, পর্তুগিজ, ইংরেজ, আফ্রিকান এমনকি মার্কিন ও অস্ট্রেলীয় পুরাণেরও এমন অনেক শব্দের উৎস-বিবরণ বইটিতে  দেওয়া হয়েছে যেগুলো আমরা প্রাত্যহিক নানা কাজে হরদম ব্যবহার করি। সে হিসাবে গবেষকদেরও বইটি কাজে লাগবে।

ড. মোহাম্মদ আমীন বাংলা বানান ও বাংলা শব্দ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করছেন। বাংলা বানান নিয়ে তাঁর একাধিক গ্রন্থ আছে। ইতোপূর্বে তার বেশ কয়েকটা বই আমি পড়েছি। এরমধ্যে ‘রঙ্গ রসে বাংলা বানান’ বইটির কথা না-বললেই নয়। এ গ্রন্থে তিনি বাংলা বানানের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও খুঁটিনাট দিক হাস্যরসের অফুরন্ত খোড়াকসহ তুলে ধরেছেন। এ গ্রন্থেও লেখকের সে রসপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। অনেকে বই কিনেন শুধু সংগ্রহের জন্য। তবে ‘বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস’ নিলে ক্রেতা শুধু সংগ্রহ করে সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। দু-একটা ভুক্তি পড়লে পুরোটা পড়ার আগ্রহ জাগবে। আমি মনে করি বইটি বাংলাভাষী প্রত্যেক পাঠকের কাছে একটি আকর্ষণীয় সংগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে। আমি বইটির বহুল প্রচার ও লেখকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।


Thursday, 16 July 2015

ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি: কল্পকাহিনির নতুন ধারা / হায়াৎ মামুদ

ড. মোহাম্মদ আমীনের ভূত-অ্যাকশন ও সায়েন্স ফিকশন গ্রন্থ ‘ ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি’ গ্রন্থে হায়াৎ মামুদের মন্তব্য ও  আলোচনা।
কল্পকাহিনি কল্পনার মতো মধুর, স্বপ্নের মতো চমৎকার। তাই কল্পকাহিনি কম-বেশি সবাইকে আকর্ষণ করে। আমি নিজেও একসময় কল্পকাহিনির ভক্ত ছিলাম। দেশ-বিদেশের অনেক কল্পকাহিনি পড়েছি এবং অভিভূত হয়ে অনেক কাহিনি অনুবাদও করেছি। তবে কল্প-বৈচিত্র্যের বহুমুখী অনুধ্যানের কারণে ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি’ বইটি কল্পকাহিনির ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা হিসাবে বিবেচিত হবে।

বইটিতে ভূতসমাজের ভৌতিক অদ্ভুত ও উদ্ভট কর্মপরিক্রমার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির প্রত্যাশিত অনেক বিষয়কে নিপুণ বিস্ময়ে তুলে ধরা হয়েছে। তাই এটি শুধু ভৈৗতিক কাহিনি নয়, বরং ভৌতিকতার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য আবেশে জড়িয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিও বটে।  শধু ভূত নয়, ভূতের সঙ্গে আছে জিন-পরি, দৈত্য-দানব, রাক্ষস-খোক্ষস এবং যন্ত্র ও মানুষ। অধিকন্তু গ্রন্থটিতে দেশপ্রেম, শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবেশ-দূষণ, রাজনীতি, মানবীয় প্রেম, ব্রহ্মা--রহস্য, বৈশ্বিক-প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান, জীবনবোধ, কুসংস্কার, ধর্মীয়-গোঁড়ামি, আধুনিক সভ্যতার সুফল-কুফল, সময়, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ, জড়বস্তুর সঙ্গে জীবের সম্পর্ক, পুনর্জন্ম, পার্থিব জগতের সঙ্গে অপার্থিব জগতের সেতবন্ধন প্রভৃতিসহ মানুষ ও বিশ্বব্রহ্মা-ের প্রাত্যহিক ক্রিয়াকলাপের বিবিধ বিষয় বাস্তবতার আলোকে কল্পনার নিশানে লোমহর্ষক বিবরণে তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিবেচনায় আমি মনে করি এটি কথাসাহিত্যে একটি নতুন সংযোজন।

গ্রন্থটির নায়ক ম্যানপি বাংলাদেশের এক তরুণ বিজ্ঞানী। সে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতিভূ। ম্যানপি তার অপরিমেয় মেধাশক্তি ও বিচক্ষণতা দিয়ে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে একই সময়ে এনে তিন কালের মানুষের সমন্বয়ে জ্ঞানের মহাসমুদ্রকে জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তার আবিষ্কার মানুষকে দিয়েছে আলোর চেয়ে অধিক গতিসম্পন্ন যান। জন্মের পূর্বে ভূতের নিকট হতে এবং যারা জন্মগ্রহণ করেনি তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যজ্ঞানের তথ্য নিয়ে ম্যানপি বিশ্ববহ্মা-কে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। ফলে ইউরোপ-আমেরিকাসহ সমগ্রবিশ্ব উন্নয়নশীল বিশ্বের আনুগত্য স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে।

বইটি পড়লে রোমাঞ্চ আর আকর্ষণ দুটোই একসঙ্গে পাঠকের মনকে  ঘিরে ধরবে। ‘ভূত-ভূমিকা, মরতে হবে’ শিরোনামে লেখকের উপক্রমণিকা পড়লেও শিউরে উঠতে হয়। এমন উপক্রমনিকা আমি আর কোনো বইতে দেখিনি।

বইটি অনবদ্য। আমার বিশ্বাস এটি কল্পকাহিনির ইতিহাসে একটি নতুন ধারার সূচনা করবে। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।

Tuesday, 23 June 2015

অফিস আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম / কলম সৈনিক



অফিস আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম


ড. মোহাম্মদ আমীন স্যারের লেখা অফিস-আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম বইটি কয়েকদিন আগে রকমারী ডটকমের মাধ্যমে ঘরে বসেই কিনেছি। খুবই প্রয়োজনীয় এবং সহায়ক একটি বই। বর্তমান সময়ে বাংলা লেখার ভুলের প্রতযোগিতায় এই বইটি সবার কাজে লাগবে।

Monday, 15 June 2015

ড. মোহাম্মদ আমীন : একনজরে / অনুসিন্থিয়া

ড. মোহাম্মদ আমীন : একনজরে
ড. মোহাম্মদ আমীন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার সৈয়দ মোহাম্মদ পাড়া গ্রামে এক অভিজাত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর  পিতা প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ পিরে কামেল ও ইসলামি সংস্কৃতির বিশিষ্ট পুরোধা হযরতুল আল-ামা সৈয়দ মৌলানা নুরুল ইসলাম। মাতার  নাম সকিনা খাতুন চৌধুরানী, মাতামহের নাম আবিদুর রহমান এবং মাতামহীর নাম বজলি বেগম চৌধুরানী।  পিতামহ প্রখ্যাত আধ্যাত্বিক সাধক পিরে কামেল হযরতুল আল্লামাি মৌলানা সৈয়দ গোলাম শরীফ। যিনি বড় হুজুর নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর  প্রথম সন্তান এস এম আবীর চৌধুরী মীম বাংলা সাহিত্যের সর্বকনিষ্ঠ লেখক। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর  লেখা রূপকথার গল্প ‘দুধবুড়ি’ প্রকাশিত হয়। সে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত শিশুশিল্পী।

বাড়িতে পিতামহের কাছে আরবি, উদুৃ ও ফারসি এবং মায়ের কাছে বাংলা শেখার মাধ্যমে মোহাম্মদ আমীনের হাতেখড়ি। অতপর বাড়ির পাশে অবস্থিত দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। উক্ত বিদ্যালয় হতে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে গাছবাড়ীয়া
নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গেউত্তীর্ণ হয়ে গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজে আইএসসি ক্লাশে ভর্তি হন। উক্ত কলেজ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি পাশ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে গমন করেন। চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে বিএ অনার্স ক্লাশে ভর্তি হন এবং পরিসংখ্যানে বিএসসি (অনার্স) ও জনমিতি বিজ্ঞানে থিসিসগ্র“পে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘মাসিক সাধারণ জ্ঞান’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি ছিল তৎকালীন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা।

ছাত্রজীবন হতে তাঁর  লেখালেখি শুরু। উচ্চবিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন চট্টগ্রাম শহরের কাজী নজরুল ইসলাম রোড হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বনভূমি পত্রিকায় তাঁর  প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটির নাম ছিল স্বাধীনতা। কবিতাটির জন্য চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র তাকে এক হাজার টাকা এবং একটি দামি কলম পুরষ্কার দেন।  এ পুরষ্কার তাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন দৈণিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ ও দৈনিক নয়াবাংলা পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাঁর  লেখাপড়ার খরচের সিংহভাগ লেখালেখি হতে আসতো। অধিকন্তু তিনি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রিলেন্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর  প্রথম গ্রন্থ ‘এ সমাজ’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র কমিটি কর্তৃক ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের বছরই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তাঁর  প্রথম পোস্টিং ছিল কুড়িগ্রাম। চাকরিতে ঢুকার পরও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। বান্দরবানে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকুরিকালীন বিধি ও আইন সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি সমস্যায় পড়েন। পার্বত্য চট্টগ্রাম হিলট্র্যক্টস ম্যানুয়াল-১৯০০ অনুযায়ী পরিচালিত। এখানকার আইন দেশের
সমতল অঞ্চলের আইন হতে ভিন্ন। কিন্তু আইন ও বিধিগুলো ছিল সব ইংরেজিতে এবং এগুলো বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত। তাই প্রয়োজনের সময় প্রশাসক ও বিচারকদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হতো। প্রশাসনকে এ অবস্থা হতে রক্ষার করার লক্ষ্যে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত সকল বিধিগুলো বাংলায় অনুবাদ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইন
শিরোনামে একটি আইন গ্রন্থ প্রকাশ করেন। প্রকাশ ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ। গ্রন্থটি তিন পার্বত্য জেলায় এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো যে, প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে ত্রিশ হাজার কপি নিঃশেষ হয়ে যায়। এরপর আরও বিশ হাজার কপি বিক্রি হয়। পঞ্চাশ হাজার কপি বই বিক্রি করে তিনি একটা মোটা অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন। চাকরি জীবনের অর্থকষ্ট ও টানাটানি অনেকটা দূরীভূত হয়। এ সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি লেখালেখিতে আরও নিবিড় ও একাত্ম হয়ে যান।

চাকরিতে থাকাকালীন তিনি সরকারের অনুমতি নিয়ে এলএলবি ক্লাশে ভর্তি হন এবং গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর  গবেষণা সন্দর্ভ- ওয়ার ক্রাইম: ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল ডেভলাপমেনট এন্ড লিগ্যাল প্র্যাকটিস। উল্লেখ্য ওয়ার ক্রাইমের উপর বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তিনি ভেদরগঞ্জ শিশুমঞ্চ নামের উন্নতমানের একটি শিশু শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তিনি মহালছড়ি শিশুমঞ্চ নামের আর একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

ছোটগল্প, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ইতিহাস, জীবনীগ্রন্থ ও ছড়াসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর  সতত বিচরণ থাকলেও তিনি মূলত একজন গবেষক হিসেবে পরিচিত। Relation Between Magistrate and Police, Meet Bandarban. Roles of Extra Judiciary Organs to ensure effective judiciary system, বাংলা বানানে ভুল: কারণ ও প্রতিকার, এক নজরে বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলন, সহজ বাংলা উচ্চারণ, আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, বাংলা সাহিত্যের অ আ ক খ,  রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কথা, বন মামলা দায়ের ও পরিচালনার কৌশল, ম্যাজিস্ট্রেসি ও আদেশনামা, জামিন তত্ত্ব ও রায়, বাংলা বানান ও শব্দ চয়ন, ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ, মামলা ও আইনি হয়রানি হতে নি®কৃতির উপায়, তুচ্ছ হলেও উচ্চ, অভয়নগর প্রোফাইল, বাংলা বানানে ভুল কারণ ও প্রতিকার, জেলা, উপজেলা ও নদনদীর নামকরণের ইতিহাস, আন্তর্জাতিক দিবস, কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা হিরাম কক্স, বাংলা সাহিত্যে প্রশাসকের ভূমিকা, বাংলা সাহিত্যে পুলিশের অবদান, বিড়ম্বনা, অফিস আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম, রঙ্গরসে বাংলা বানান, বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন, বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, শুদ্ধ বানান চর্চা ইত্যাদি ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা গ্রন্থ।

জনাব মোহাম্মদ আমীনের প্রথম উপন্যাস জল দুনিয়ার মানুষ। এটি তিনি অভয়নগর
উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনা জেলার দীঘলীয়া উপজেলাব্যাপী প্রতিক্রিয়ারত ভবদহ এলাকার জলবন্দি মানুষের জীবনের প্রাত্যহিককর্মকাণ্ড, সমস্যা, সুখ-দুঃখ ও সম্ভাবনা নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার  আলোকে রচনা করেন। নন্দিত কান্না ও নিন্দিত হাসি জনাব আমীনের একটি গবেষণামূলক উপন্যাসধর্মী রচনা। এ গ্রন্থটি রচনার জন্য তিনি দুই মাস ভিক্ষুক সেজে ভিক্ষাবৃত্তি করেছেন। এ গ্রন্থের জন্য তিনি আইইআই পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর  দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বহ্নিবিবুক্ষ’।  বহ্নিবিবুক্ষ উপন্যাসে দাম্পত্য জীবনের দ্বন্দ্ব ও বিবাহিত জীবনের স্বরূপ উন্মোচণ করা হয়েছে। তাঁর  তৃতীয় উপন্যাস ‘স্বপ্ন জড়ানো পাহাড়’। এটি পাবর্ত্য এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালি সম্পর্ক এবং ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ের উপর বাস্তব অভিজ্ঞতার  আলোকে রচিত। রাজকীয় জীবন ও শারমেয় মরণ ড. আমীনের লেখা একটি রম্য উপন্যাস। এ উপন্যাসে বিবাহিত ও অবিবাহিত জীবনের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিস্তৃত হয়েছে।

রমণীয় পাঁচালী তাঁর  প্রথম রম্য রচনা। তাঁর  লেখা অন্যান্য রম্যরচনাগুলো হচ্ছে নন্দলালের তীর্থযাত্রা, উল্টোদেশে নন্দঘোষ, গদাই বাবুর তীর্থযাত্রা, নিমকহারাম রাজকুমারী, খরগোশ ও খচ্ছপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  খরগোশ ও খচ্ছপ গ্রন্থে কল্পিত ইসপের দৌড় প্রতিযোগিতায় যেখানে খরগোশকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে ড. আমীনের গ্রন্থে খরগোশকে জয়ী করা হয়েছে এবং কচ্ছপ কারচুপির মাধ্যমে জিতেছে বলে তাঁর  হাতপা ভেঙ্গে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তাঁর  শিশুতোষ গ্রন্থ ‘মানুষই সেরা’ হাসতে হাসতে বাংলা শেখা, টাকা ছোট পয়সা বড়, ছোটদের আন্তর্জাতিক দিবস ও ছোটদের বাংলা উচ্চারণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আঞ্চলিক ইতিহাসের উপর জনাব আমীনের ঝোঁক লেখালেখির প্রথম হতে লক্ষ্যণীয়। হাতিয়ায় উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন তাঁর  প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থ ‘তিলোত্তমা হাতিয়া: ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ড. আমীন হাতিয়া জনকল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম ও হাতিয়া শিক্ষা ও গবেষণা সমিতি কর্তৃক পুরষ্কারে ভূষিত হয়। তাঁর  অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে অভয়নগরের ইতিহাস, চকোরিয়ার ইতিহাস, ভেদরগঞ্জের ইতিহাস এবং জেলা, উপজেলা ও নদনদীর নামকরণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

জীবনীগ্রন্থ রচনাতেও তিনি সমানভাবে সফল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতা, জর্জ ওয়াশিংটন হতে বারাক ওবামা, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক; ১৯০১-২০১১। প্রথমোক্ত গ্রন্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতার জীবনী, জাতির  পিতা হিসেবে তাদের বেড়ে উঠা ইত্যাদি পরিবেশিত।

বহ্নিবিবুক্ষ ও পাহাড় বরন তাঁর  জনপ্রিয় দুটি উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস নারীপুরুষ ও স্বামীস্ত্রীর স্বরূপ বিবর্ধনে সংসারের প্রকৃত অবস্থার জীবন্ত কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রন্থের প্লট পাবর্ত্য এলাকা। লেখক পার্বত্য এলাকায় চাকরি করেছেন। অধিকন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সন্তু লারমার বড় ভাই মানবেন্দ্র লারমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। যা চট্টগ্রামের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সে ভিত্তিতে তিনি এ উপন্যাসে পাহাড়ি বাঙ্গালি সম্পর্ক, পার্বত্য এলাকায় কর্মরত অফিসারগণের প্রতি সাধারণ্যের দৃষ্টিভঙ্গী ।

ড. আমীন বাংলা একাডেমী, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইতিহাস সমিতি, আইএআরএইচ প্রভৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য। তিনি এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

Saturday, 7 March 2015

খরগোশ ও কচ্ছপ/ এস এম আবীর চৌধরী মীম

পশুরাজ্যে আনন্দের জোয়ার।

অফিস-আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম: ড. মোহাম্মদ আমীনের অসাধারণ একটি গ্রন্থ/ হায়াৎ মামুদ

অফিস-আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম: ড. মোহাম্মদ আমীনের   অসাধারণ একটি গ্রন্থ/হায়াৎ মামুদ

অফিস-আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম’ ডে. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি গ্রন্থ। বইটি শুধু রসকষহীন কোনো ব্যাকরণ নয়। ব্যাকরণের জটিল সূত্র বা নিয়-নীতিদিয়েও ভারাক্রান্ত করা হয়নি। এখানে সহজ-সরল ভাষায় প্রাত্যহিক কর্মজীবনে ব্যবহৃত প্রমিত বাংলা লেখার কৌশল বিধৃত করা হয়েছে। লেখক একজন চাকুরিজীবী। চাকুরিজীবী
হিসাবে বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি বইটি
রচনা করেছেন। এখানে এমন সব শব্দ, বানান ও বাক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো দাপ্তরিক কর্মকান্ডে প্রতিনিয়ত প্রয়োজন। বইটি এমনভাবে রচনা করা হয়েছেযাতে সরকারি-বেসরকারি সর্বস্তরের অফিষ-আদালত, শিক্ষপ্রতিষ্ঠান, চাকুরিজীবী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, বিদেশ অবস্থানরত বাংলাভাষী ও সাধারণ মানুষ সহজে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বাংলা শুদ্ধভাবে লেখার কৌশল রপ্ত করতে পারেন। শুদ্ধ ও প্রমিত বানান শেখার জন্য বইটি পেশা ও বয়স-নির্বিশেষে সবার হাতের কাছে রাখা প্রয়োজন- সকলের এমন ধারণাই পোষণ করি।

রঙ্গরসে বাংলা বানান: ভূমিকা নয়, স্বাগতম/ হায়াৎ মামুদ





ভূমিকা নয়, স্বাগতম

হায়াৎ মামুদ

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা, একইসঙ্গে দুটোই। ১৯৫২ সালের ২১শে ও ২২শে ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন তাঁরাই কিন্তু তাঁদের অজান্তে
স্বাধীন  সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বীজ বপন করেছিলেন। আমাদেরই উদাহরণে এখন আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বমাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ।
সবই অতি উত্তম। কিন্তু এ সবের অন্দরমহলে লুকোনো আরেকটা কথাও আছে, যা অন্যেরা জানে না। সেটি হল মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষার প্রতি আমাদের সাম্প্রতিক অবহেলা। এই দুর্লক্ষণ অনেকেরই নজর এড়ায় নি, এবং তাঁরাই এগিয়ে আসছেন এর প্রতিকারকল্পে কিছু একটা করার জন্যে।

বাক্প্রত্যঙ্গ সক্রিয় থাকলে সব মানুষই কথা বলে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে, তা যে-ভাষাতেই হোক-না কেন। অথচ ‘ভাষা’ বিষয়টি আদৌ সহজ কোনো ব্যাপার নয়। তাকে শিখতে হয় অনেক কষ্ট করে। বলা-কওয়া, লেখালেখি, ভাষণ দেওয়া-কত কিছুই না। সবই আয়াসনির্ভর ও আয়ত্তসাপেক্ষ। সে কারণেই নির্ভূল লেখার জন্যে সব ভাষাতেই কত অসংখ্য ধরনের বইপত্তর।
 নিজের মা ও মাতৃভাষা সমার্থক। এমন কথা অনেক আগে থেকেই বহু মনস্বী ব্যক্তি উচ্চারণ করে আসছেন। কথাটি খাঁটি সত্য, কিন্তু এই সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য নিষ্ঠা আবেগ অনুভূতি ইত্যাদি বহুকিছুর প্রয়োজন, এবং সেইসঙ্গে দরকার নিরন্তর চর্চা- বলার ও লেখার।
‘রঙ্গরসে বাংলা বানান’ যে অন্তর্গত প্রেরণা থেকে ড. মোহাম্মদ আমীন লিখতে উদ্ধুদ্ধ হলেন তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। এ-বই মাতৃভাষাপ্রেমী সকল বাঙালির প্রয়োজন মেটাবে, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি। হাওলাদার প্রকাশনীকেও ধন্যবাদ তাঁরা এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে।

মানুষই সেরা: ড. মোহাম্মদ আমীনের অনবদ্য গল্পগ্রন্থ / অনুসিন্থিয়া জাহান চৌধুরী

 মানুষই সেরা

‘মানুষই সেরা’ বইটি সামাজিক জীব মানুষকে নিয়ে লেখা। লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। এ বইয়ে লেখক চমৎকার একটি গল্পের মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবেশ সচেতন করে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন। আমাদের
পরিবেশ দিন দূষিত হচ্ছে, তার প্রধান কারণ মানুষ। অনেক মানুষ তাদের ঘরের আবর্জনা রাস্তায় যেখানে সেখানে ফেলে রাখে। আবার এমন অনেক মানুষ আছে, যারা যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে। মানুষের এই নির্বিচার কর্মকাণ্ডে পশুরা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। মানুষের এমন কর্মকাণ্ড পশুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও ব্যহত করে দিচ্ছে। তাই পশুরা মানুষের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বইটির গল্গ অনুযায়ী, মানুষের নির্বিচার পরিবেশ দূষণমূলক কাজ ক্রমশ অসহণীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে পশু পাখিরা রেগে যায়। তারা দাবি করে, পরিবেশের প্রতি যারা এমন আচরণ করে সে মানুষ কখনও শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। পশুদের দাবি মানুষ নয়, তারাই শ্রেষ্ঠ। মানুষ তখনই শ্রেষ্ঠ হবে, যখন  সে কেবল নিজের উপকার নয়, তার চারপাশের পরিবেশকেও সুন্দর রাখবে ও উন্নত করবে। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধি ও কথা বলার ক্ষমতা দিয়ে জোরপূর্বক শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে বিশ্বে রাজত্ব করছে। এটি পশুরা আর মেনে নিতে চাইল না।
মানুষ যতই পরিবেশ দূষণ করতে থাকল, শক্তি ততই কমতে থাকল। অন্যদিকে পশুদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। তারা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার করে নিজেরাই বিশ্বে রাজত্ব করার সকল আয়োজন সম্পন্ন করে নেয়। অবশেষে মনুষ্য সমাজের এক নিরূপায় নেতা বিহীত ব্যবস্থার জন্য এক সাধুর কাছে গেলেন। সাধু বললেন: মানুষ যদি তার সমস্ত ইচ্ছা শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে, তবে পরিবেশ দূষণকে থামাতে পারবে। একমাত্র তখনই মানুষ দাবি করতে পারবে যে, সে-ই শ্রেষ্ঠ। তারপরও মানুষ কিছু করতে পারল না। অবশেষে নেতা আত্মহত্যার প্রত্যয় নিয়ে জঙ্গলে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পান এক বিড়াল কীভাবে তার মলমূত্রকে মাঠি-চাপা দিচ্ছে। বিড়ালের কর্ম থেকে তিনি শিক্ষা নিলেন কীভাবে বর্জ্যকে নিরাপদ রাখতে হয়।
গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক জানাতে চেয়েছেন যে, মানুষ তার সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করলে পরিবেশ দূষণের যথার্থ কারণগুলো খুঁজে, নিজেদের শুধরে পরিবেশকে বাঁচিয়ে প্রমাণ করতে পারবে, মানুষই সেরা।

ড. মোহাম্মদ আমীনের বইয়ের তালিকা/ এস এম আবীর চৌধুরী মীম

ড. মোহাম্মদ আমীনের  বই

১. জর্জ ওয়াশিংটন হতে বারাক ওবামা; আগামী প্রকাশনী, ২০০৯, মূল্য - ৪০০ টাকা।
২. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতা; আগামী প্রকাশনী, ২০১১, মূল্য - ৩০০ টাকা।
৩. সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১৯০১-২০১৩; আগামী প্রকাশনী, ২০১২, মূল্য - ৫০০ টাকা।
৪. বৈচিত্র্যময় তথ্যে সচিত্র নোবেল প্রাইজ; আগামী প্রকাশনী, ২০১১; মূল্য - ২০০ টাকা।
৫. বঙ্গবন্ধুর বাণী; আগামী প্রকাশনী; ৭০ টাকা।
৬. সুবেদার আহমদ হোসেন বীর প্রতীকের জবানিতে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ ; আগামী প্রকাশনী, ২০০৫, মূল্য - ৮০ টাকা।
৭. হাসতে হাসতে বাংলা শেখা ; আগামী প্রকাশনী, ২০০৬, মূল্য - ৮০ টাকা।
৮. বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ; আগামী প্রকাশনী
৯. সহজ বাংলা উচ্চারণ; আগামী প্রকাশনী; ২০০৬, মূল্য - ৯০ টাকা।
১০. আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী; আগামী প্রকাশনী
১১. বঙ্গবন্ধু চিরন্তন মহামানব; আগামী প্রকাশনী, ২০১০; ১০০ টাকা।
১২. নন্দিত কান্না নিন্দিত হাসি ; আগামী প্রকাশনী; ২০০৭, মূল্য - ১০০ টাকা।
১৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : অলৌকিক মহিমা; আগামী প্রকাশনী, ২০০৬; মূল্য - ৭০টাকা।
১৪. দুই রাজ কুমারী ; আগামী প্রকাশনী, ২০০৮, মূল্য - ৭০ টাকা।
১৫. রমণীয় পাঁচালী; আগামী প্রকাশনী; ২০০৭, মূল্য - ৮০ টাকা।
১৬. খরগোশ ও কচ্ছপ; আগামী প্রকাশনী, ২০০৮, মূল্য - ৮০ টাকা।
১৭. বদল বাড়ির ভূত; আগামী প্রকাশনী, ২০১০, মূল্য -৭৫ টাকা।
১৮. মানুষই সেরা; আগামী প্রকাশনী, ২০০৫; মূল্য - ৪০ টাকা।
১৯. আন্তর্জাতিক দিবস ( ছোটদের); আগামী প্রকাশনী, মূল্য - ৭০ টাকা।
২০. অভয়নগরের ইতিহাস ; আগামী প্রকাশনী; ২০০৬, মূল্য - ৬০০ টাকা।
২১. মোহনীয় নরক; আগামী প্রকাশনী, ২০১৩; মূল্য - ৪৫০ টাকা।
২২. বাংলা বানানে ভুল কারণ ও প্রতিকার; আগামী প্রকাশনী, ২০১১, মূল্য - ৩০০টাকা।
২৩. তিলোত্তমা হাতিয়া: ইতিহাস ও ঐতিহ্য; হাতিয়া সমিতি, চট্টগ্রাম, ২০০১; মূল্য - ২০০টাকা।
২৪. তিলোত্তমা হাতিয়া : সমস্যা ও সম্ভাবনা; প্রকাশক, চেয়ারম্যানবৃন্দ, ২০০২, মূল্য - ১০০ টাকা।
২৫. সিঙ্গাপুর আইসিটি সম্মেলনে সৈয়দ আবুল হোসেন; আনন্দধারা, ২০১২, মূল্য - ২০০ টাকা।
২৬. উল্টোদেশে নন্দ ঘোষ; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০১১; মূল্য - ১২৫ টাকা।
২৭. ভেদরগঞ্জের ইতিহাস; উপজেলা প্রশাসন; মূল্য - ১০০ টাকা।
২৮. চকরিয়ার ইতিহাস; আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটার; ২০০২; মূল্য - ২০০ টাকা।
২৯. ম্যাজিস্ট্রেসি ও আদেশনামা; জাগৃতি প্রকাশনী; ২০০২, মূল্য - ৯০ টাকা।
৩০. ইসলামি মূল্যবোধ ও বঙ্গবন্ধু; জাগৃতি প্রকাশনী; ২০০৬, মূল্য - ২৫০ টাকা।
৩১. বাংলা সাহিত্যের অ আ ক খ; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০০২, মূল্য - ৯০ টাকা।
৩২. বাংলা বানান ও শব্দ চয়ন; জাগৃতি প্রকাশনী; মূল্য -১২৫ টাকা।
৩৩. রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কথা; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০০৩; মূল্য - ৬৫ টাকা।
৩৪. বন মামলা দায়ের ও পরিচালনার কৌশল; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০০২, মূল্য - ৬০ টাকা।
৩৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইন; বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, ২০০০; মূল্য - ৩৫০ টাকা।
৩৬. জামিন তত্ত্ব ও রায়; মেরিট প্রকাশনী; ২০০০, মূল্য - ৭০ টাকা।
৩৭. মামলা ও আইনি হয়রানি হতে নিষ্কৃতির উপায়; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০০৩, মূল্য - ৬০ টাকা।
৩৮. প্রশাসনের ভাইরাস; নিজ, ১৯৯৯, মূল্য - ৭০ টাকা।
৩৯. আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, জাগৃতি প্রকাশনী, মুল্য - ৭০ টাকা।
৪০. জল দুনিয়ার মানুষ; অনন্যা; ২০১১, মূল্য -১৬০ টাকা।
৪১. সময়ের পরশ পাথর; জাগৃতি প্রকাশনী; ২০১৩, মূল্য - ৬০০ টাকা।
৪২. সময়ের পরশ পাথর; আনন্দধারা, ২০১৩, মূল্য - ১০০০ টাকা।
৪৩. জেলা, উপজেলা ও নদ-নদীর নামকরণের ইতিহাস; গতিধারা; ২০১২, মূল্য - ৬০০ টাকা।
৪৪. শুদ্ধ বানান চর্চা; শুবাচ , ২০১৪, মূল্য - ১৫০ টাকা।
৪৫. রাজকীয় জীবন, শারমেয় মরণ; হাওলাদার প্রকাশনী, ২০১৩; মূল্য - ১৫০ টাকা।
৪৬. আন্তর্জাতিক দিবস (রঙিন); হাওলাদার প্রকাশনী; ২০১৪, মূল্য - ৫৫০ টাকা।
৪৭. স্বপ্ন জড়ানো পাহাড়; বিজয় প্রকাশনী; ২০১২, মূল্য - ২০০ টাকা।
৪৮. গদাই বাবুর তীর্থযাত্রা; মিজান পাবলিশার্স, ২০১১; মূল্য - ৭৫ টাকা।
৪৯. Women marriage and love, ড. মোহাম্মদ আমীন, হাওলাদার প্রকাশনী।
৫০. রঙ্গরসে বাংলা বানান, ড. মোহাম্মদ আমীন, হাওলাদার প্রকাশনী
৫১. অফিস-আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম, ড. মোহাম্মদ আমীন, মাওলা ব্রাদার্স।
৫২. বিড়ম্বনা, ড. মোহাম্মদ আমীন, জাগৃতি প্রকাশনী।
৫৩. শুদ্ধ বানান চর্চা, ড. হায়াৎ মামুদ ও ড. মোহাম্মদ আমীন
৫৪. বাংলা সাহিত্যে পুলিশের ভূমিকা
৫৫. দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান নির্দেশিকা
৫৬. বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
৫৭. বাংলা শব্দের পৌরানিক উৎস
৫৮. ভূত অঙ্কের জিরো থিওরি
৫৯. ভেত ভূতের ইন্তেকাল
৬০. ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স
৬১. মানুষ ও বিড়াল

জল দুনিয়ার মানুষ / মাহবুব হোসেন


‘জল দুনিয়ার মানুষ’ একটি উপন্যাস। বাস্তবতা ও কর্মস্থলে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত এ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসের ভাণ্ডারে একটি অনন্য সংযোজন হিসাবে বিবেচিত। খুলনা বিভাগের 
ভবদহ নামটি জলাবদ্ধতার কারণে সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও আলোচনা ও নিষ্ঠুর প্রাকৃতিক প্রতিশোধের এক করুণ স্মৃতি। যশোর ও খুলনা জেলার চারটি উপজেলার মানুষের অভিশাপ ভবদহ, ভবদহ স্লুইস গেইট। অভয়নগর উপজেলার ভবদহ এলাকায় নির্মিত স্বপ্নের স্লুইস গেইট কীভাবে মানুষের দুঃসহ যাতনার কারণ হয়ে উঠেছে তার সকরুণ বিবরণ উপন্যাসটির মূল আলেখ্য। এখানকার মানুষ আগে কেমন ছিল এখন কেমন তাদের জীবনযাত্রা, কীভাবে তারা সারাবছর জলের উপর বাস করছে তার বিবরণ পড়লে পাঠকমাত্রই ভয়ে শিউরে উঠবেন।
ভবদহে আসলে মাটি নেই। তাহলে মানুষ কীভাবে বাস করে? কীভাবে জলে কোনরূপ জলযান ছাড়া মানুষ বাস করছে তা এ উপন্যাসে লেখক তুলে ধরেছেন। এ এক নৃশংস অভিজ্ঞতা। প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ করলে প্রকৃতি কীভাবে তার প্রতিশোধ নেয় - তার জীবন্ত চিত্র ড. মোহাম্মদ আমীনের জল দুনিয়ার মানুষ।
অনন্যা থেকে প্রকাশিত উপন্যাসটির মূল্য একশত ষাট টাকা।বইটি পড়ুন, তারপর বুঝতে পারবেন, ভবদহ এলাকার মানুষ কত কষ্টে আছে।

চকরিয়ার ইতিহাস/ অনুসিন্থিয়া জাহান চৌধুরী


ড. মোহাম্মদ আমীন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা গবেষক। তিনি ইতিহাস, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, গবেষক, প্রাবন্ধিক, জীবনীকার, রম্যরচয়িতা ও জীবনীকার হিসেবে বেশ পরিচিত ও সুনামের অধিকারী।আঞ্চলিক ইতিহাস লেখায় তিনি বাংলাদেশে অনত্যম কৃতিত্বের অধিকারী একজন বিরল ব্যক্তিত্ব।
কক্সবাজার জেলার প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত ‘চকরিয়া’ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড, জন-বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক শোভা প্রভৃতি বিবেচনায় এ রকম অনিন্দ্য উপজেলার সংখ্যা বাংলাদেশে খুব একটা বেশি নেই। তবু এ উপজেলার ইতিহাস রচিত হয়নি দীর্ঘ কয়েক হাজার বছরেও। ড. মোহাম্মদ আমীন চকরিয়ার উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে যোগদানের পর চকরিয়ার ইতিহাস লিখতে শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি রচনা করেন চকরিয়ার উপজেলার প্রথম ইতিহাস। কেউ স্বীকার করুন বা না-করুন, গ্রন্থটি রচনা করে ড. মোহাম্মদ আমীন ঐতিহ্যবাহী চকরিয়ার ইতিহাসে  ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবেন আযুগ।

এটি শুধু ইতিহাস নয়, অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব, ধর্ম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ভুগোল, জনমিতি প্রভৃতির তথ্যবহুল বিবরণে ঋদ্ধ একটি অনবদ্য গ্রন্থ। কী নেই এখানে? ইতিহাস কত প্রাণবন্ত হতে পারে, হতে পারে কত জীবন্ত এবং সাবলীল তা এ গ্রন্থটি না পড়লে অনুধাবন করা যাবে না।
ছয়ত্রিশ অধ্যায়ে পরিব্যাপ্ত এ ইতিহাসগ্রন্থে চকরিয়ার প্রাচীনত্ব, জনতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ; আয়তন, অবস্থান ও প্রশাসনিক কাঠামো; চকরিয়ার নামকরণ, ইউনিয়ন ও গ্রামসমূহের নামকরণ, চকরিয়ার প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিাহাস, সামন্ত শাসন, চন্দ্র ও দেব বংশের আমলে চকরিয়া, ভেসালি রাজ্য ও মুসলিম অভিযান, চকরিয়ায় মুসলমানদের আগমন, সুলতানি আমল, আফগান আমল, চকরিয়ায় শাহ শুজা, আরাকানি আমল,  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে চকরিয়া, ব্রিটিশি আমল, মুক্তিযুদ্ধ ও চকরিয়া, চকরিয়ার পার্লামেন্ট প্রতিনিধি, ঐতিহ্যময় চকরিয়া, চকরিয়ার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি, চকরিয়ার সুন্দরবন, ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও প্রকাশনা, ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসব, ধর্ম ও ধর্মীয় বিকাশ, রাখাইন ভাষা ও সাহিত্যাঙ্গন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান, জাতীয় উন্নয়নে চকরিয়ার ভূমিকা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, লবণ ও হিমায়িত মাছ, চকরিয়ার বাইরে চকরিয়া, একনজরে চকরিয়া প্রভৃতি বিবরণ চমৎকার ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে।
চকরিয়াবাসী ছাড়াও দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আগ্রহী সবার কাছে বইটি একটি অমূল্য সংগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে। ড. মোহাম্মদ আমীনকে চকরিয়ার মানুষ ভুলে যেতে পারে কিন্তু চকরিয়া ও চকরিয়ার ইতিহাস কোনদিন ভুলতে পারবে না। কারণ ইতিহাস স্থানের মতো স্থান ও ভূমির সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন হৃদ্যতায় জড়িত।