Wednesday, 1 November 2017

অর্হণা উপন্যাসের জীবন্তায়ন / এরশাদ হোসেন আবীর

অর্হণা 

অর্হণা (Ar'haṇā) একটি উপন্যাস।এর লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘স্যমন্তক’। আলোচিত ও প্রশংসিত এই উপন্যাসের দ্বিতীয় কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্ঝর খণ্ড অর্হণা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন, মামুন হোসাইন এবং প্রকাশক হচ্ছে, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা। বইটির পাণ্ডুলিপি পড়ে আমি এতই মুগ্ধ হয়েছি যে, রিভিউ না লিখে পারলাম না। অর্হণা শব্দের আভিধানিক অর্থ পূজা, সম্মান, যোগ্যতা। ইংরেজিতে বলা যায়, ‍adoration, worthiness প্রভৃতি। 
অন্নদাশঙ্কর রায়, আহমদ ছফা, ড. মফিজ আলী চৌধুরী, আহমদ শরীফ, ডাক্তার নুরুল
ইসলাম, কবীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, মযহারুল ইসলাম, আবদুল মাননান সৈয়দ, নরেন বিশ্বাস, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ, আবদুল কাইউম, আসকার ইবনে সাইখ, শফিউদ্দীন আহমেদ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রফেসর গ্রিয়েল, প্রফের ব্রুম, প্রফেসর মিন্ড্রা, শ্রাবন্তীনাহা, শাহিদা সুলতানা, অরুণাভ সরকার, আবদুল আলিম, নাজিম উদ্দিন মোস্তান, ওসমান গনি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হায়াৎ মামুদ, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ আলী আহসান, কে এম শিহাব উদ্দিন, আখতারুজ্জামান বাবু, প্রফেসর কোবাইসি মাসাহিতো, অধ্যাপক টিআই চোধুরী, ভাষাবিষারদ প্রফেসর রচনাসহ আরও অনেক কালজয়ী কবি-সাহিত্যিক এই উপন্যাসের চরিত্র।
অর্হণা উপন্যাসের ভূমিকায়  হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, “সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা আর মানবীয় মূল্যবোধের সুষমিত প্রগাঢ়ত্বের সঙ্গে এতগুলো বিস্ময়কর চরিত্রের চরিত্রায়ণ উপন্যাসটিকে করে তুলেছে অনবদ্য। চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথন, সজ্জা আর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা এতই নিবিড় যে, অনুভবকেও হার মানিয়ে দেয়। এমন একটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে -- এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ” 
হায়াৎ মামুদ আরো লিখেছেন, “উপন্যাসে চরিত্রবর্গের আলাপচারিতায় সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি, সংস্কার-কুসংস্কার, ধর্ম, আর্থ-রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত নির্দেশিত হয়েছে তা গভীর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অভাবিত আন্তরিকতাপুষ্ট ঋদ্ধ দ্যোতনায় দ্যোতিত। সর্বোপরি উপন্যাসের নায়িকা কল্পনার সঙ্গে নায়কের ভীষণ স্পর্শকাতর সম্পর্ক পাঠককে নুতন ভাবনায় মারাত্মক দ্বিধায় ফেলে দেবে। বাংলা সাহিত্যেকে এমন একটি অসাধারণ উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য আমি লেখক ড. মোহাম্মদ আমীনকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।”
স্যমন্তক উপন্যাসের ভূমিকায় লেখক বলেছিলেন, রচনা (স্যমন্তক-এর নায়িকা) যতদিন বেচেঁ থাকবে আমার উপন্যাস লেখা ততদিন চলতে থাকবে। লেখক কথা রেখেছেন, তাই আমরা শীঘ্রই পেতে যাচ্ছি স্যমন্তক উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ড। যার নাম অর্হণা!  
স্যমন্তক উপন্যাসের ভূমিকা যেমন প্রাণবন্ত তেমনি অর্হণা উপন্যাসের ভূমিকাও প্রাণবন্ত, অনবদ্য। এমন ভূমিকা পাঠককে গভীর আবেগে টেনে-হিচড়েঁ উপন্যাসের ভেতরে নিয়ে যাবে। অবিশ্বাস্য হলো, স্যমন্তক উপন্যাস প্রথমেই ইতিহাস ও উপন্যাস কাকে বলে বলা ছিল। অর্হণা উপন্যাসের শুরুতেও ইতিহাস ও উপন্যাস নিয়ে কথা রয়েছে।  
লেখকের ভাষায়,  উপন্যাস ইতিহাস নয়, ইতিহাস উপন্যাস নয়। তবুও দুটোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।উপন্যাস বাহ্যিক বিষয়াদি পর্যাবেক্ষণ করে থেমে থাকে না, গভীরে
অর্হণার লেখক ও আমি আবীর
ডুকে অন্তরের খবরও বের করে আনে। ইতিহাস কেবলই বাইরের বিষয়াদি দেখে। তাই ইতিহাসের অর্ন্তদর্শন ভাসা ভাসা। ইতিহাস ছবির মতো, ছবি দেখে যেমন মনের খবর পাওয়া যায় না, তেমনি ইতিহাস পড়ে অন্তরের খবর পাওয়া যায় না। এ কাজটি ইতিহাসের চেয়ে উপন্যাস ভালো পারে। উপন্যাস তথ্য- তথ্যের সঙ্গে কল্পনার সরস মুগ্ধতা দিয়ে পরিবেশিত হয়। এখানে হৃদয় কল্পনাকে নিয়ে খেলে, কল্পনা খেলে হৃদয়কে নিয়ে।
অর্হণা উপন্যাসে কিন্তু কল্পনা ও হৃদয় গভীর দাগ কাটবে! কারণ অর্হণা উপন্যাসটি কল্পনাকেই উৎসর্গ করা হয়েছ!  এমন জীবন্ত উপন্যাস আমি আর পড়িনি। দেখুন পরিচিত নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়তে কত ভালো লাগে। আপনার মনে অজানা এক শিহরন দেবে প্রেমে আর বোদ্ধমায় সমৃদ্ধতায়। প্রতিটি লাইন স্মরণীয় বাণী হয়ে অনেকদিন মোহিত রাখবে আপনাকে।
এমন চমৎকার ভূমিকা পড়েই অর্হণা পড়ার লোভ সামলানো দায়! কিন্তু কী আর করা, অপেক্ষার মধুর আনন্দ থেকে পাঠককে এ মুহূর্তে বঞ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বইটি এখনো প্রকাশিত হয়নি, হবে।  পাওয়া যাবে আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০১৮) পুথিনিলয়-এর স্টলে। দাম? দুইশ টাকার কম।
২/ ১১/ ২০১৭ খ্রি.


No comments:

Post a Comment