Saturday, 23 January 2016

চকরিয়া উপজেলা কক্সবাজার / আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটার

আমি যখন শুনতে পাই, চকরিয়ার উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমীন চকরিয়া নিয়ে কাজ করছেন। অফিস সময়ের পর তিনি বেরিয়ে পড়েন ইতিহাসের সন্ধানে। অনেকে সমালোচনাও শুরু করেছেন।ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে বই লেখেন।কয়েকজন শিক্ষক, সাংবাদিক ও পেশাজীবী আমাকে ড. আমীন সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য দিলেন।ছাত্র জীবন হতে তিনি লেখালেখি করে আসছেন।চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলাতে বাড়ি।আমি রাজনীতি করি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাহস করে একদিন উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কাছে গেলাম। চকরিয়ার ইতিহাস রচনায় আমার আগ্রহ শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন তিনি।আমার হাতে একটা পাণ্ডুলিপি দিয়ে দেখতে বলেন। চোখ দিয়ে আমি অবাক। ইতিহাস তো হয়েই গেছে।
বললাম, আমি প্রকাশ করব।তিনি রাজি হলেন। প্রকাশ করে ফেললাম চকরিয়ার ইতিহাস। একদিন ইতিহাস গ্রন্থটা কেমন হয়েছে দেখানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এশিয়া মহাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ড. করিম সাহেবের কাছে যাই। উল্লেখ্য ড. করিম আমার আত্মীয় এবং তিনি ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি  পদে ছিলেন আবদুল করিম (জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন)  গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলা বাঁশখালী উপজেলা চাপাছড়িতে ভিন্ন উপজেলা হলেও, ভৌগলিক দিক হতে উভয় উপজেলার অনেক মিল ছিল। একসময় নাকি দুটো উপজেলা অভিন্ন ছিল।যাই হোক, ড. করিম, জনাব মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘চকরিয়ার ইতিহাস’ বইটি পড়তে শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি বইয়ে একাগ্র হয়ে পড়েন। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বই হতে মুখ তুলে বলেন : মোহাম্মদ আমীন কে?
আমাদের উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট।প্রশাসন ক্যাডারের লোকের পক্ষে কীভাবে এমন তথ্যবহুল ইতিহাস লেখা সম্ভব হলো? এ তো অবিশ্বাস্য, আমি তো এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস আর দেখিনি।ড. করিমের এমন প্রশংসা আমাকে প্রকাশক হিসাবে গর্বে অভিভূত করে দেয়। আবার পড়তে শুরু করেন। মনে হয় আরও আধঘণ্টা। তারপর আবার মুখ তুলে বললেন : ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে আসেন, আমি তার কাছ থেকে ইতিহাস লেখার এমন অদ্ভুদ কৌশলটা শিখব।ড করিম বললেন: এটি কেবল নামেই ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু ইতিহাস নয়।ভূগোল, জনমিতি, ধর্ম, বিবর্তন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্রমবর্ণনা, জনজীবনে সমুদ্রের প্রভাব, শরণার্থী, প্রস্তর যুগ হতে বঙ্গযুগ- সব বিবরণ এমন নির্ভুল তথ্যসহকারে তুলে ধরেছেন, যা আমার পক্ষে সম্ভব হতো কখনও।ছেলেটিকে নিয়ে আসুন। আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলব, আমার শেষ ইতিহাসের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।ড. আমীনকে আমি এ কথা বলেছিলাম।তিনি খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ড. করিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কিন্তু আজ-কাল করে যাওয়া হয়নি। শেষপর্যন্ত ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই ড. আবদুল করিম চিরদিনের জন্য আমাদের সাক্ষাতের বাইরে চলে যান। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।                     
এখন বইটির প্রবল চাহিদা। লন্ডন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে চকরিয়ার অনেক লোক আছে। তারা আমাকে ফোন করেন, ফোন করে বইটি পাঠানোর অনুরোধ করেন। আমি গর্ব বোধ করি। এমন সম্মানজনক ও স্থায়ী কাজ আমার পক্ষে আর কখনও করা সম্ভব হবে না। বইটির মাঝে আমি বেঁচে থাকব।বেঁচে থাকবে বইটির লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। যতদিন চকরিয়ার থাকবে, ততদিন আমরা চকরিয়ার স্মৃতি আমাদের কাজে অক্ষয় হয়ে থাকবে। মরণশীল মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!এখন চকরিয়ার উপর অনেক কাজ হচ্ছে, যা হচ্ছে সব ড. আমীনের লেখা ‘চকরিয়ার ইতিহাস’ গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকাশক হিসাবে এটি আমার অনেক বড় পাওয়া।
     ---------------------------------------------
প্রবন্ধটির লেখক :  আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটার 

No comments:

Post a Comment