মোহাম্মদ আমীন: “যেদিক দিয়ে বিবেচনা করা হোক না, সৈয়দ আবুল হোসেন একজন খাঁটি মানুষ, খাঁটি বন্ধু, যাঁর চিন্তা চেতনা তাঁর হাসির মতোই আকর্ষণীয়”- সৈয়দ আবুল হোসেনকে এভাবে প্রকাশ করলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত। ‘রাজনীতি হতে শুরু করে জীবনের প্রত্যেকটি কর্মকান্ডে সৈয়দ আবুল হোসেন মানবিক মূল্যবোধ দ্বারা সজ্জিত। গ্রহণের অসামান্য উদারতা তাঁকে আলোর মতো নিবিড় আর আকাশের মতো অপরিমেয় শ্রদ্ধায় মহান করে তুলেছে। ‘সময় জীবনের অবয়ব, কর্ম তার অলঙ্কার’-প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডাঃ হাসমত আলী, পিএইচডি সাহেবের এ মন্তবের সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। প্রখ্যাত আইনজীবী ড. একেএম আখতারুল কবিরের ভাষায়, ‘সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে জীবন প্রকৃতির দান কিন্তু উন্নত জীবন-যাপন কর্মের উপহার। তাই তিনি জীবনকে শুধু সময় দিয়ে নয়, কর্ম ও অধ্যবসায়ের সমন্বিত প্রাঞ্জলতায় বিভূষিত করার প্রত্যয়ে দৃপ্ত রাখাকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার উপায় মনে করেন।’ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ছেলে প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী মনে করেন, ‘সৈয়দ আবুল হোসেন একজন ভালো বন্ধু। আদর্শ মানুষ না হলে কারও পক্ষে ভালো বন্ধু হওয়া সম্ভব নয়। কাজ, আনন্দ, বিশ্রাম ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল- সর্বত্র তিনি সাবলীল আর নান্দনিক।’ প্রাক্তন সচিব ‘সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরীর মতে, ‘এত উদার, নিরহঙ্কার, অমায়িক ও সজ্জন ব্যক্তি বর্তমানে বিরল।’ প্রাক্তন সচিব হাসনাত আবদুল হাই-এর ভাষায় বলা যায়, ‘তাঁকে অনুকরণ করার ইচ্ছা হবে অনেকের, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে তাঁকে অনুকরণ করা যাবে না। তিনি একজন অনন্য ও ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব, যাদের জীবন ও কর্ম উৎসাহের এবং প্রেরণার উৎস।’ সৈয়দ আবুল হোসেন সম্পর্কে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আবদুল মান্নানের অনুভূতি- ‘’ এর মার্জিত রূপ দেখা যায় সৈয়দ আবুল হোসেনের চরিত্রে।
ছাত্রজীবন হতে সৈয়দ আবুল হোসেন মেধাবী, বুদ্ধিমান ও অমায়িক ছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন বিনয়ী, তেমনি ছিলেন ধীর। শান্তশিষ্ট অথচ তীক্ষè মেধার অধিকারী। তার স্মরণশক্তি ও গ্রহণ ক্ষমতা ছিল অবিশ্বাস্য। একবার কোনো কিছু শুনলে কিংবা দেখলে সহজে ভুলতেন না। স্কুলজীবনে শিক্ষকগণ তাঁকে চলন্ত অভিধান ডাকতেন। পুরো ডিকশনারি ছিল তার নখদর্পণে। গৌরনদী কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মো. তমিজ উদ্দিনের ভাষায়, ‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। মাথা নিচু করে অথচ সটান রাজপুত্রের মতো চলাফেরা করতেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল মোলায়েম ও মার্জিত। কারও সাথে রূঢ় ভাষায় কথা বলতেন না। বিনয়ের সাথে রাজকীয় জৌলুসের মিশ্রণ সৈয়দ আবুল হোসেনকে বিরল মাধুর্যমন্ডিত করে তুলেছিল।’১
অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন সৈয়দ আবুল হোসেনের শিক্ষক। তাঁর ভাষায়, “মানুষ হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেন অত্যন্ত সজ্জন। তিনি নিজের ক্ষতি করতে পারেন, তবে অন্য কারও নয়। সৃষ্টির সব কিছুর প্রতি তিনি মমত্বশীল। আমাদের চারিপাশে যা আছে সব কিছুতে তার দৃষ্টি আলোর মতো অবিরাম, বৃষ্টির মতো স্নাত, বিকেলের রোদের মতো ঈষদুষ্ণ।”২ সৈয়দ আবুল হোসেনের ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনের বন্ধু আব্দুল কাদের সাহেবের ভাষায়, “সৈয়দ আবুল হোসেন সবসময় উচ্ছল, সবসময় আন্তরিক, কথা ও কাজে তাঁর বিন্দুমাত্র ফাঁক থাকে না।” বন্ধু হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ড. এম মান্নান বলেছেন
কৃতজ্ঞতাকে মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট প্রকাশ বলা হয়। সৈয়দ আবুল হোসেন কৃতজ্ঞতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেউ তাঁর সামান্য উপকার করলে তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না। তিনি মনে করেন তিনি প্রতিটি মানুষের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞ। হয়ত তাই কারও ক্ষতি করতে পারেন না।
এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কবীর কথা প্রসঙ্গে একদিন বলেছিলেন, ‘সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনীতিবিদ হয়েও পরম নিরপেক্ষতার ভূষণ। তিনি যখন মন্ত্রীর চেয়ারে বসেন তখন আদর্শ প্রশাসক। পেশাদার প্রশাসকের মতোই নিরপেক্ষ। রাজনীতি বা দলের প্রতি অনুগত থেকে কীভাবে দেশের উন্নয়ন করা যায় সেটিই তাঁর মুখ্য বিষয়। এরূপ নিরপেক্ষতা কেবল বিচারের নিক্তিতে পরিমাপ্য। রাজনীতিক পরিমন্ডলে রাজনীতিক পদ বিন্যাসে কোনো দেশের সংসদের স্পিকারকে সবচেয়ে বেশি নিরপেক্ষ থাকতে হয়। সৈয়দ আবুল হোসেন স্পিকার নন, তবু তাঁর নিরপেক্ষতা সর্বাঙ্গীন সুন্দর। তাঁর ভাষা, কথা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব অসাধারণ। যে কোনো মুহূর্তে যে কোন বিষয়ের উপর যে কোনো প্রশ্নের এমন উত্তর দেন যা প্রশ্নকারী, শ্রোতা এবং পক্ষ-বিপক্ষ সবাইকে সন্তুষ্ট করার উপাদানে ভরপুর থাকে। কারও প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পায় না।’ ছাত্রজীবনেও তিনি ছিলেন ন্যায়বান ও নিরপেক্ষ। ডাসার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হলে সবাই সৈয়দ আবুল হোসেনকে বিচারক মানত এবং তিনি নিরপেক্ষভাবে ন্যায়ভিত্তিক সমাধান দিতেন।৪ এ গুণটা তাঁর মাঝে এখন আরও বেশি পরিদৃষ্ট হয়। সন্ত্রাসী সে যেই হোক না কেন, নিজের ভাই হলেও ছাড় দেন না। ফলে তার নির্বাচনী এলাকায় কোনো সন্ত্রাস নেই বা দলবাজি কিংবা কোন্দল নেই।
কালকিনিতে তিনি অজাতশত্রু। মাদারীপুরে অবিসংবাদিত নেতা। মন্ত্রণালয়ে দূরদর্শী মন্ত্রী, বিচক্ষণ প্রশাসক এবং সমগ্র বাংলাদেশে মার্জিত চরিত্রের অধিকারী একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালের মতে, ‘দলের প্রতি নিবেদিত এমন নেতা খুব কম আছে। গৌরবময় কর্মের মাধ্যমে তিনি সতত উজ্জ্বল।’ কালকিনির সংখ্যালঘুরা তাকে বলেন দেবতা; বিরোধী দলের লোকেরা মনে করেন বন্ধু, নিরাপদ আশ্রয়। তিনি আওয়ামী লীগ করেন। আওয়ামী লীগ কারও নিজস্ব দল নয়, আমজনতার দল। বঙ্গবন্ধু এভাবে চিন্তা করতেন। বঙ্গবন্ধুর নিবিড় অনুসারী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে দল নয়, দেশই বড়। মানুষ নয়, কর্মই বিবেচ্য।
সহানুভূতি মানব জীবনের একটি অনবদ্য গুণ। খুব কম প্রাণীর মধ্যে এটি দেখা যায়। একজন মানুষের মনুষ্যত্ব যে বিষয়টা দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিস্ফুট হয়, সেটি সহানুভূতি। সৈয়দ আবুল হোসেন সহানুভূতির এক অনুপম দৃষ্টান্ত। এ প্রসঙ্গে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- অশীতিপর বৃদ্ধ মবিন হাওলাদার লাঠিতে ভর করে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায়। এ সময় সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অনেক শিশু ডাসার প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বাড়ি ফিরছিল। বৃদ্ধের পতন দেখে সবাই হেসে ওঠে। সৈয়দ আবুল হোসেন হাসলেন না, তার চোখ জলে ছল ছল করে উঠল। বইগুলো মফিজুল হকের হাতে দিয়ে লোকটাকে তুলে দিলেন।
এ রকম আর একটি ঘটনা সৈয়দ আবুল হোসেনের স্কুলজীবনের সঙ্গী লাল মিয়ার জবানিতে শোনা যেতে পারে- এলাকায় সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিবার ছিল তুলনামূলকভাবে সচ্ছল। খরচার জন্য টাকা দিলে সে নিজে খরচ করত না। গরিবদের দিয়ে দিত। যাদের বই নেই তাদের বই কেনার জন্য সাহায্য করত। একদিন আমরা ঝড়ে আম কুড়োচ্ছিলাম। সে তিনটা আম পেয়ে বাড়ির দিকে চলে আসছে। এ সময় একটা ছেলে আম পায়নি বলে কাঁদছিল। আবুল হোসেন তা দেখে সবগুলো আম ছেলেটিকে দিয়ে দিয়েছিল। ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে। তখন আবুল হোসেন ক্লাশ ফাইভে। এক জেলের কাছ হতে মাছ কিনল। জেলে দাম বলল: ‘দাম দশ টাকা।’ জেলের কথামতো আবুল হোসেন জেলের হাতে দশ টাকা দিয়ে বলল: ‘আপনার আর কোনো পাওনা আছে?’ জেলে অবাক হয়ে আবুল হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘তুমি একদিন অনেক বড় হবে।’ জেলের আশীর্বাদ ফলেছে।৭ তিনি বিবাহের পূর্বেই হজব্রত পালন করেছিলেন। সাথে ছিলেন প্রাণপ্রিয় জননী। মক্কা-মদিনার দীর্ঘপথে বাসে একজন যাত্রী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পথিমধ্যে ঐ অসুস্থ যাত্রীকে হাসপাতালে নেয়ার ঝামেলা কেউ গ্রহণ করতে আগ্রহ দেখালেন না। যুবক সৈয়দ আবুল হোসেন মাঝপথে নেমে ঐ অসুস্থ যাত্রীর চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
সময়বোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার উজ্জ্বল আলেখ্য সৈয়দ আবুল হোসেন। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সফিক আলম মেহেদির ভাষায়, “এত চেষ্টা করেও মন্ত্রী মহোদয়ের পূর্বে অফিসে আসতে পারিনা। তিনি আসেন সাড়ে নয়টায়, অথবা যখন আসার কথা তখন; এক সেকেন্ড এদিক ওদিক হয় না। রাজনীতি করেন, নিজস্ব অফিস করেন, সভা-সমিতি করেন, দর্শনার্থীদের সময় দেন; পরিবার-পরিজন দেখেন- এতকিছুর পরও সবকিছু কীভাবে যথাসময়ে করেন ভেবে বিস্মিত হই।” তাঁর সময়ানুবর্তিতার একটি ঘটনা সড়ক ও রেলপথ বিভাগের যুগ্মসচিব জনাব মো. মোস্তফার ভাষায় শোনা যেতে পারে- ২০০৯ এর সেপ্টেম্বর/অক্টোবর-এর দিকে মন্ত্রী মহোদয় সরকারি সফরে দক্ষিণ কোরিয়া হতে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করলেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে হতে রাত প্রায় তিনটা। বিমানবন্দরে আমাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা অনেকেই ধরে নিয়েছিলাম যে হয়ত তাঁর পরের দিন নিত্যকার অভ্যাসমতো সকাল নয়টার মধ্যে সকল কর্মকর্তাদের সাথে মন্ত্রী মহোদয়ের যে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হওয়ার কথা, তা হবে না। ফলে আমার মতো বেশ কয়েকজন রাতের ক্লান্তি-শ্রান্তির কারণে সকাল নয়টার বেশ পরে মন্ত্রী মহোদয়ের কক্ষে উপস্থিত হই। আর তখনই বিস্ময়ের ধাক্কা। জানলাম, মন্ত্রী মহোদয় নিত্যকার অভ্যাসের কোনো ব্যত্যয় ঘটাননি। অর্থাৎ তিনি সকাল নয়টার পূর্বেই অফিসে উপস্থিত হয়েছেন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যিনি সর্বদাই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চলে এসেছেন সাফল্যের সোনালি সবুজ হরিণ তো তাঁরই করায়ত্ত্বে থাকবে- এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অনেক লোক আছে তাদের সবসময় ব্যস্ত দেখা যায়, অথচ কাজের মতো কোনো কাজ থাকে না, করে না। সৈয়দ আবুল হোসেন মনে করেন, ব্যস্ততা কাজের অনুষঙ্গ। এটি দেখানোর কিছু নয়, কাজ করতে করতে ব্যস্ততা নীরবে চলে আসে। তাই সব কিছু ধীরস্থিরভাবে করা উচিত। প্রথমে বেছে নিতে হবে পছন্দ। তারপর বিবেচনা, অতঃপর সিদ্ধান্ত এবং সবার শেষে কার্য। সৈয়দ আবুল হোসেন মনে করেন, তাই তিনি অসংখ্য কাজের মধ্য হতে গুরুত্বপূর্ণগুলো বেছে নেন।
কর্মে তিনি গণিতের মতো আক্ষরিক, চিন্তায় সময়ের মতো গতিশীল, ভালোবাসায় প্রকৃতির মতো লাস্যময়, স্নেহে পিতার মতো সুবিনয়; বিপদে ধরিত্রীর মত ধৈর্যশীল। তিনি আগামীকালের অপেক্ষায় থাকেন না, ওটি কখনও আসে না। আবার সাফল্যের জন্যও অপেক্ষা করেন না। সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় তাঁর নেই। তাই সাফল্য ছাড়াই তিনি এগিয়ে চলেন। বাধ্য হয়ে সাফল্যই তাঁর পিছু নেয়। তিনি লক্ষ্যে স্থির। কোথাও তাড়াতাড়ি পৌঁছার চেষ্টা করার আগে কোথায় যেতে হবে এবং কীভাবে যেতে হবে সেটিই আগে স্থির করে নেন। তাই তাঁর লক্ষ্য চ্যুত হয় না, সময় অপচয় হয় না। তিনি অতীতের জন্য আফশোস করেন না এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে অস্থিরও হন না। তাই সর্বক্ষণ অবিচল থাকতে পারেন। সৈয়দ আবুল হোসেন মিতভাষী। অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন না। কর্ম, জয়-পরাজয় ও ত্যাগ এ ত্রয়ী সমন্বয়ে জীবনের প্রতিটি বিষয়কে উপভোগ করেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নির্মল আনন্দে। লক্ষ্য ভেদকে সৈয়দ আবুল হোসেন গন্তব্যস্থল মনে করেন না, মনে করেন পরবর্তী যাত্রার হাতছানি। পথ যত লম্বা হোক তার নজর সেদিকে পড়ে না। তিনি বিশ্বাস করেন, যার আরম্ভ আছে তার শেষও আছে। অসীমতার শুরু বিন্দু হতে। যেখানে পুরাতনের শেষ সেখানে নতুন কিছুর শুরু। পুরাতনের জন্য অহেতুক কান্না সময় নষ্ট ছাড়া কিছু নয়। যা হবার হবে, এতে বিচলিত হয়ে লাভ কী!
জীবনকে কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে সততার সাথে পরিচালনা করেন বলে তাঁর মুখে হাসির ছটা বৈকালিক প্রহরের মতো লেগে থাকে। তাঁর কাজ মমতায় জীবন্ত, শাসনবিন্দু রূপোলি আলোর মতো মুগ্ধকর। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কলামিস্ট, সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী, সংগঠক, লেখক, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এতগুলো প্রত্যয়কে নিয়েও তিনি পথ চলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ব্যাঘাত ঘটে না সংসার জীবনের। সময় দেন সবাইকে যার যেমন প্রাপ্য। উপস্থিত হন যেখানে প্রয়োজন। সৈয়দ আবুল হোসেনের কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মপ্রবণতার উদাহরণ টানতে গিয়ে তরুণ তপন দেওয়ান বলেছেন, ‘যেখানে এক পদ্মা সেতুই যে কোনো লোকের ঘুম হারাম করে দিতে পারে, সেখানে পদ্মা সেতুর বাড়তি চাপ নিয়ে এত বড় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বহুমাত্রিক কাজের মনিটরিং করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। অথচ তিনি (সৈয়দ আবুল হোসেন) তা খুবই চমৎকারভাবে করে যাচ্ছেন। এত কর্মযজ্ঞের মাঝেও মুখের হাসির মলিনতা নেই।১০ এর কারণ হচ্ছে ডগবার্ট ডি রিউনেস এবং জর্জ স্যান্ড এর ন্যায় তিনিও মনে করেন-
সময়কে যদি কর্মের মাধ্যমে প্রগতিভূত সৃষ্টির প্রতি অনুগত রেখে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য অধ্যবসায়-প্রসূত অদম্যতা বিমূর্ত করা যায়, তাহলে সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির কাছে কোনো কিছু অসম্ভব নয়। কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সময়ের প্রতি সতর্কতা শেখার প্রতি আগ্রহ, সৃষ্টির প্রতি প্রেম, মানুষের প্রতি ব্যবহার দিয়ে যদি কোনো ব্যক্তিকে বিচার করা হয়, তাহলে সৈয়দ আবুল হোসেন নিঃসন্দেহে একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ।১১ আমি মনে করি, তিনি এমন একটি বড় মনের অধিকারী যিনিÑ প্রবাদটি অনুক্ষণ মনে রেখে পথ চলেন। নইলে এমন উদারতা কীভাবে বর্ষণ করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব! তিনিও তো অন্যান্য মানুষের মতো রক্তমাংশের অধিকারী।
সৈয়দ আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক। জাতির দুঃসময়ে আপন বলয়ে সামর্থ্যরে পূর্ণ ডালা নিয়ে এগিয়ে যান মানুষের প্রয়োজনে, জাতির কল্যাণে। উজাড় করে দেন নিজের সামর্থ্য। মানিকগঞ্জ ও সাটুরিয়া এবং ১৯৮৮ ও ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে মহাবন্যায় দুর্গত মানুষের প্রতি উজাড় করে দিয়েছিলেন বিত্ত ও চিত্ত। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির প্রতি অবিচল আস্থা এবং প্রগাঢ় শ্রদ্ধা তাঁর অস্থিমজ্জার অংশ। এ বিশ্বাসে অবিচল থেকে দেশের কল্যাণে, মানুষের মঙ্গলে উদাত্ত মাধুরিমায় স্বাধীনতার স্বাদকে পরিপূর্ণ আনন্দে উপভোগের ক্ষেত্র প্রস্তুতে তিনি প্রতিনিয়ত ঐকান্তিক। শিক্ষাবিস্তারকে তিনি জাতি বিনির্মাণের মূল নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শিক্ষা ছাড়া উন্নয়ন, উন্নয়ন ছাড়া সভ্যতা এবং আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ছাড়া স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায় না। তাই সৈয়দ আবুল হোসেন শিক্ষাবিস্তারে নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতির মতো অশেষ বিভবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার অনাবিল সম্মান, শ্রদ্ধাময় ভালোবাসা ও অবিচ্ছিন্ন সহানুভূতি মুক্তিযুদ্ধের পরও থেমে থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা চরম আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। সৈয়দ আবুল হোসেন উদার মমতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পাশে ছুটে এসেছিলেন। গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়েছিলেন গৃহ, বস্ত্রহীনে বস্ত্র, খাদ্যহীনে খাদ্য। চিকিৎসার জন্য অনেক মুক্তিযোদ্ধা দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। অনেকে টাকার অভাবে সোমত্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলেন না। সৈয়দ আবুল হোসেন নিজ তহবিল হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের সকল অভাব পূরণ করেছিলেন। সে সময় তিনি অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের হারানো মনোবলকে চাঙ্গা করেছিলেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা এস্কান্দর শিকদারের ভাষায়, ‘আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেন আমাদের পাশে বটবৃক্ষের ন্যায় দাঁড়িয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন- ভয় নেই, আমি আপনাদের পাশে আছি। তিনি এখনও আমাদের পাশে আছেন। আমরা প্রতিনিয়ত তার নেতৃত্বে জাতির উন্নয়নের জন্য নতুন আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধ করে যাচ্ছি। এ যুদ্ধ উন্নয়নের, শিক্ষার, প্রগতির এবং অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোয় উৎসারিত হবার।১২
কর্মস্থলে তিনি অমায়িক বাৎসল্যে পরিশুদ্ধ একটি আলোকবর্তিকা। সৈয়দ আবুল হোসেনের সংস্পর্শ সবাইকে পরশপাথরের মত বদলে দেয়, গড়ে তুলে নতুন ভাবনার চিরন্তন সৌকর্যে। তিনি বলেন কম, প্রকাশ করেন অধিক। শোনেন বেশি, শুনান কম। আইন-কানুন, বিধি-বিধান, রাষ্ট্র ও প্রশাসন সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয়ে তার সম্যক জ্ঞান রয়েছে। যা প্রয়োজন হতে পারে তা তিনি পূর্বাহ্নে হƒদয়ঙ্গম করে আলোচনায় আসেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাবার আগে প্রয়োজনীয় সকল অস্ত্র নিয়ে নামেন। পরাজয় স্বাভাবিক, তাই বলে পরাজয়কে বিনা প্রতিরোধে মেনে নেয়ার পাত্র তিনি নন। পরাজয় তাঁকে আহত করে না, বরং নব-প্রত্যয়ে দীপ্ত করে। ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে ভুলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অবলীলায়। তাঁর ভাষায়, ‘আই এ্যাম এ সেল্ফমেইড ম্যান, আই থিংক এভরিওয়ান ক্যান রিচ, হোয়ার আই এ্যাম; শো আই হ্যাভ রেসপেক্ট ফর অল।’
জননেত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় সান্নিধ্য সৈয়দ আবুল হোসেনের অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধু তাঁর আদর্শ, শেখ হাসিনা রাজনীতিক গুরু এবং আদর্শিক অভিভাবক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও শেখ হাসিনার স্নেহধন্য সৈয়দ আবুল হোসেন আওয়ামী লীগকে নিজের চেয়েও পরম মমতায় লালন করেন। ওয়ান-ইলিভেনের পর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য তাঁর ভূমিকা ও বুদ্ধিমত্তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাকানো ষড়যন্ত্রে অংশ নাÑনেয়ায় তাঁকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তবু তিনি মাথা নোয়াননি। তাঁর পরিষ্কার উক্তি, জীবন দেবো তবু নেত্রীর প্রতি আনুগত্য হতে এক চুল নড়ব না।১৪ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলকে প্রচুর অর্থ আর উপদেশ দিয়ে সহায়তা করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে তার নিরলস শ্রম ও ব্যয় চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।১৫ দেশ গঠনে সৈয়দ আবুল হোসেনের ভূমিকা বিশাল পরিব্যাপ্ততায় নির্ভরতার বৈপ্লবিক অহঙ্কার।
মার্জিত ভাষা ও সুললিত কণ্ঠের অধিকারী সৈয়দ আবুল হোসেনের কণ্ঠ যেমন মুগ্ধকর তেমনি অনাবিল, মধুময়। প্রতিটি বাক্য অকাট্য যুক্তির নির্যাস; স্পষ্ট এবং অর্থবহুল। অপ্রয়োজনীয় কথা বলাকে তিনি অপ্রয়োজনীয়ভাবে বুলেট ছোড়ার সামিল মনে করেন। যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান ও ব্যক্তি নির্বাচনে তাঁর জুড়ি নেই। প্রাক্তন সচিব সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরীর ভাষায়: কোনো ব্যক্তিকে কি দায়িত্ব দিতে হবে তা তিনি লোকটিকে এক পলক দেখেই বুঝে নিতে পারেন।
নিরহঙ্কারী মানুষ ও সহনশীল রাজনীতির প্রবক্তা সৈয়দ আবুল হোসেন স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার নজরে নমস্য বিমূর্ততায় অভিভূত হয়ে উঠেছেন। বহুমুখী তার যোগ্যতা। তিল তিল পরিশ্রমে সাকো ইন্টারন্যাশনালের মতো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও নিতান্তই অনাড়ম্বর। ব্যবসার মতো রাজনীতিতেও ঈর্ষণীয় সাফল্যের অধিকারী। তবু নির্লোভ। যার লোভ নেই, তিনি সবার কাছে লোভনীয়, আকর্ষণীয়। মন্ত্রণালয়ে সচিব হতে শুরু করে পিয়ন, গ্রামে ধনী হতে শুরু করে ভিক্ষুকÑ সবার প্রতি সমভাবালুতা সৈয়দ আবুল হোসেনের মহানুভবতার অনাবিল প্রমাণ।১৬
সৈয়দ আবুল হোসেন আপাদমস্তক পরিচ্ছন্ন। অনুপম শৈলীকলার সহনশীল সমসত্তায় নিগূঢ় তাঁর প্রতিভা। তবে কিছুটা লাজুক; নিভৃতচারী ও প্রচার-বিমুখ। কর্মে তিনি এত বিশ্বাসী যে, প্রচার নামক বিষয়টি তেমন দাগ ফেলতে পারে না। কাঠ নিজে পুড়ে অন্যকে আলো দেয়, ফুল-ফল ও সবুজের সম্ভার মাটির অবদান। কিন্তু মাটির খবর কেউ রাখে না। ঠিক তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেন। অনেক কিছু করেও তিনি নিজেকে সাধারণ ভাবেন। শিক্ষা, উন্নয়ন, সংগঠন, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, পরিবেশ, প্রশাসন ইত্যাদিসহ আর্থসামাজিক পরিমন্ডলের সর্বক্ষেত্রে তাঁর অবদান কীর্তিময়তায় ধ্র“ব। জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ নাÑকরার শর্তে বললেন, তিনি যেখানে যান সেখানে একটি পরম আবহ সৃষ্টি করেন, সৃষ্টি করেন অনুকূল পরিসঞ্চালন। মানুষের মন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মোহনীয় হয়ে ওঠে। তাই তিনি অসাধারণ হয়েও সাধারণ, সাধারণ হয়েও অসাধারণ।’১৭ ‘বাতাস ছাড়া মানুষ এক মুহূর্ত বাঁচতে পারে না। কিন্তু বাতাস আছে বলে আমরা তাঁর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারি না। বাতাস না থাকলে বোঝা যেত, এটি কী। ঠিক তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেন দেশের জন্য আমাদের কালকিনির জন্য কত প্রয়োজন এটি সেদিনই অনুধাবন করা যাবে যেদিন তিনি থাকবেন না।’
সারা বাংলাদেশে সৈয়দ আবুল হোসেন একটি পরিচিত মুখ। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর উদার একাগ্রতা সর্বমহলে প্রশংসিত। শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সৈয়দ আবুল হোসেনের অনুধ্যায়ী চেতনার উজ্জ্বল প্রকাশ। তৃতীয় বিশ্বে তাঁর মতো উদার লোক খুব কম আছে। বাংলাদেশে অনেক লোক আছে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি বিত্তের অধিকারী কিন্তু তাঁর মতো চিত্তের অধিকারী নাÑহলে তো আর নিজের কষ্টার্জিত অর্থ এমন মহান উদারতায় দান করা যায় না। সার্বিক কর্মকান্ড বিবেচনায় আমেরিকার বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথা শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মানুষ পদকে ভূষিত করে। শিক্ষা বিস্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শেরে-বাংলা পদক, জাতীয় পুরস্কার, অতীশ দীপঙ্কর পদক এবং মোতাহার হোসেন পদক ছাড়াও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনের কথা, আচরণ কিংবা ব্যবহারে প্রতিপক্ষ কখনও আহত হন না। তিনি কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বলেন না। সংসদে, মাঠে, রাজনীতিক মঞ্চে, অফিসে, মন্ত্রণালয়েÑ সবখানে তিনি অমায়িক, মার্জিত। কেউ তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও তিনি ক্ষুব্ধ হন না। তিনি ‘রাগ ও ক্ষুব্ধতাকে’ পাগলামির নামান্তর মনে করেন। অনেক সময় অনেকে তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তিনি থাকেন সাবলীল, সহাস্য। এরূপ হাসি দিয়ে তিনি কত রাগান্বিত লোকের হƒত স্বাভাবিকতা পুনরায় ফেরত দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। কৃতজ্ঞতা তাঁর চরিত্রের আর একটি বিশেষ গুণ। কেউ তাঁর সামান্য উপকার করলে তিনি তা কথা, কাজ আর নিষ্ঠা দিয়ে অসংখ্যভাবে ফেরত দিয়ে দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, যাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল আকাশের চেয়ে বিশাল, সে মহামানবের কন্যার মন্ত্রীসভার সদস্য এবং তাঁর পাশে বসে দেশ পরিচালনায় অংশ নিতে পারার সুযোগকে তিনি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।১৮ এ মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার প্রত্যয় তাঁকে প্রতি মুহূর্ত সচেতন রাখে, সতর্কতায় বিচক্ষণ রাখে।
শিক্ষক সমাজকে তিনি সবসময়েই অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকেন। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯৪ সালের ঢাকার রাজপথে অবস্থান ধর্মঘটের সময়ে তিনি তাদের জন্য তাঁবু ও খাবার-দাবারের আয়োজন করেন। একজন শিক্ষক ইন্তেকাল করলে তিনি তার সন্তান-সন্ততির শিক্ষা ও পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন। যা দেশবাসীর সামনে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। মন্ত্রী হলেও তিনি তাঁর শিক্ষকদের দেখলে এখনও পায়ে ধরে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর শিক্ষক ভক্তি দেখে আপ্লুত হয়ে তার এক শিক্ষক বলেছেন, “জানি না পৃথিবীর ইতিহাসে কয়জন শিক্ষক সক্রেটিস হইবার জন্য আলেকজান্ডার পাইয়াছেন তবে আমি পাইয়াছি। আমি সক্রেটিস না হইতে পারি, আমার ছাত্র সৈয়দ আবুল হোসেন আমার জন্য বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার।” শিক্ষকদের অবদান তিনি অত্যন্ত সম্মানের সাথে স্মরণ করে থাকেন এবং প্রায়শ বলেন :
গুরু যদি এক বর্ণ শিষ্যরে শিখায় কোনোদিন,
পৃথিবীতে নেই দ্রব্য যা দিয়ে শোধ দিবে ঋণ।
অনেকে রাজনীতি করেন ক্ষমতার জন্য, ভোগের জন্য। সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনীতি করেন ত্যাগের জন্য, উন্নয়নের জন্য। রাজনীতিতে আসার পর তিনি রাজনীতি হতে এক পয়সাও লাভবান হননি বরং তাঁর আগমন বাংলাদেশের রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে, পরিশুদ্ধ করেছে। পরের ধনে পোদ্দারি কি রাজনীতি? আমাদের দেশে রাজনীতি মানে পরের ধনে পোদ্দারি, ছোট ছোট জনগণের বিন্দু বিন্দু ক্ষমতা জড়ো করে অধিকাংশ রাজনীতিক জনগণের উপর পোদ্দারি করেন। সৈয়দ আবুল হোসেন এমন একজন মানুষ যিনি জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিয়ে পুরো নিঃস্ব হবার প্রত্যয়ে দৃপ্ত। নিপাট অধ্যবসায়, প্রগাঢ় মনোনিবেশপ্রসূত অভিজ্ঞান ও কৃতজ্ঞতার তিলোত্তম মহিমায় বিভূষিত এবং অভাবনীয় অন্তর্দৃষ্টি ও যৌক্তিক মিথষ্ক্রিয়ার মাঝে সত্য-মিথ্যা ও বাস্তবতাকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এক অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে সৈয়দ আবুল হোসেনের। তাই তিনি পা হতে মাথা পর্যন্ত মননে-দর্শনে পরিপূর্ণ আদর্শের অনুসরণীয় একজন আকর্ষণীয় নেতা।
সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনীতিবিদ, তবে গতানুগতিক নন। তিনি যুক্তিতে অমিয়, বস্তুনিষ্ঠায় অনুপম। বাংলাদেশে তিনি সহনশীল রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। রাজনীতির মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বীর গলা জড়িয়ে ধরতে পারেন পরম ভালোবাসায়, নিবিড় শ্রদ্ধায়। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কোনো দলবাজি নেই। উন্নয়ন ছাড়া তিনি কিছু বোঝেন না, ভালোবাসা ছাড়া কিছু অনুভব করেন না। তাঁর ভোটারগণও তাঁর প্রতি অনুরূপ অনুরক্ত। তারা সৈয়দ আবুল হোসেন ছাড়া আর কিছু বোঝেন না। তাই নির্বাচনী এলাকায় নাÑগিয়েও তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন ছিল তাঁর জীবনের প্রথম সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন প্রচারণার জন্য শুধু একদিন এলাকায় গিয়েছিলেন। তাতেই প্রতিপক্ষকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রাক্তন সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ওয়ালীউল্লাহর ভাষায়, ‘আমাদের চাঁদ প্রয়োজন। তবে চাঁদকে কোলে নিয়ে বসে থাকার জন্য নয়; জ্যোৎস্নার জন্য। সূর্য নয় সূর্যের আলো সবার কাম্য। সূর্য দূরে না কাছে, এটি বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য হচ্ছে আলো। তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেন এলাকায় কম যান নাকি বেশি যান সেটি আলোচ্য হতে পারে না। আলোচ্য বিষয় তিনি এলাকার জন্য কি করেছেন এবং করছেন। তিনি তাঁর অবস্থান থেকে অর্জিত উর্বরতা কালকিনিতে প্রতিনিয়ত সরবরাহ করছেন। সূর্যের মতো তাঁর আলো সতত বিস্তৃত সর্বত্র।’
আবেগের কাছে নয় বরং আবেগই তাঁর বশ্য। আবেগ যাঁর কাছে বশ্যতা স্বীকার করে তিনি অসাধারণ। এমন মানুষ ঋদ্ধতার আকাশ, উদারতার মুগ্ধতায় সবুজ প্রান্তর আর ফুলেল চাদরে আবৃত রাশ রাশ প্রশান্তি। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা অধিকাংশ রাজনীতিবিদের স্বাভাবিক চরিত্র। সৈয়দ আবুল হোসেন কখনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না। বরং সিদ্ধান্তই তাকে বাস্তবতার বিমূর্ত বিকেলের মতো নন্দিত করে তোলে। তাই তাঁর সিদ্ধান্তগুলো সব সময় নিবিড় মাঠের গভীর মাটির সোঁদা গন্ধের মতো নান্দনিক হয়ে ওঠে। যুক্তিগ্রহণ মানসিকতা, ঔদার্যময় প্রেরণা ও যথামূল্যায়নের কার্যকর দক্ষতা তাঁকে সংকট মোকাবেলায় অলৌকিক ব্যক্তিত্বে রূপায়িত করেছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো বিশাল ও স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তাঁর আচরণ ও কথাবার্তায় কোনো অহংবোধ কিংবা অশালীনতা প্রকাশ পায়নি।
ধর্ম সম্পর্কে তাঁর ধারণা, অভিব্যক্তি ও বিশ্বাস যেমন উদার তেমনি প্রজ্ঞাময়। তিনি মুসলমান, বিয়ের পূর্বে হজ করেছেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। তাঁর শরীরে হযরত আলীর রক্ত। তবে তিনি অসাম্প্রদায়িক। তাঁর ভাষায়, ‘চূড়ান্ত বিশ্লেষণে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলেই একই স্রষ্টার সৃষ্টি। মানবতার চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই। আমি সে মানবতায় বিশ্বাসী। চিন্তা ও চেতনায়, কাজে ও কর্মে একজন মানবতাবাদী ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে আমার অবস্থান। সে ভাবেই আমি শিক্ষা পেয়েছি। সেভাবেই জীবন গড়েছি। মনুষ্যত্বের পরিচয়েই আমি মানুষকে বিচার করে থাকি। আমার কাছে সবসময় মানুষই বড়। আমার ব্যবহারিক জীবনেও এ আদর্শই আমি সবসময়েই অনুসরণ করে আসছি।’২০ তিনি আরও বলেন, ‘একটি অসাম্প্রদায়িক খাঁটি বাঙালি পরিবেশে আমি মানুষ হয়েছি এবং সেই শিক্ষাই ধারণ করে চলেছি। সেই শিক্ষাই ধারণ করে চলব আমৃত্যু। সেই শিক্ষাই আমাকে প্রণোদিত করেছিল, উদ্বুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে।’২১ তাঁর দৃঢ় ঘোষণা, ‘
নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা রক্ষায় সৈয়দ আবুল হোসেনের আন্তরিকতা সতত প্রশংসনীয়। নারী শিক্ষার প্রসারে তিনি নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা একাডেমি এন্ড উইমেন্স কলেজ। ঐ কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের যাবতীয় ব্যয়ভার সৈয়দ আবুল হোসেন নিজেই বহন করেন। নারী ও নারীশিক্ষার প্রতি সৈয়দ আবুল হোসেনের দরদ প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর এক বাল্যবন্ধু বলেন, ‘কোনোদিন তাকে আমি কোনো মেয়ের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে দেখিনি। কোনো মেয়ের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করতেও দেখিনি। সে এগুলো প্রচন্ড ঘৃণা করত। নারীর প্রতি এত মর্যাদা দিতে আর কোনো মানুষকে আমি দেখিনি। নারী শিক্ষার জন্য তাঁর আগ্রহ নারীর প্রতি মর্যাদা ও তাদেরকে আর্থসামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহের প্রমাণ বহন করে। সে এখন নারীশিক্ষার জন্য অনেক স্কুল কলেজ ও কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।’২২
অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি এত সচেতন এবং এত নিষ্ঠাবান যে, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর সকল পথ অবারিত হয়ে যায়। তিনি যা বলেন মেপে, যা করেন ভেবে। প্রত্যেকটি কাজ নিবিড় পর্যক্ষেণ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সম্পন্ন করেন। তিনি বিনয়ী, ভদ্র ও মার্জিত। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হয় কোমল; প্রকৃতপক্ষে আপোষহীন চেতনায় অনড় একটি ভীষণ হিমালয়, যদি সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যত্যয় ঘটে। তাঁর জীবনের অনেক ঘটনা এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ।২৩ বাংলাদেশে তাঁর চেয়ে অনেক ধনী ব্যবসায়ী, অনেক বড় রাজনীতিবিদ আছেন; কিন্তু কে কয়টা সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মতো আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন!
সৈয়দ আবুল হোসেনের সমাজ চিন্তার মতো পরিবার চিন্তাও অত্যন্ত উদার এবং নিবিড়। তিনি মনে করেন, ঞযব ভধসরষু রং ঃযব হঁপষবঁং ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ. রাজনীতিক ও সামাজিক জীবনের মতো পারিবারিক জীবনেও তিনি সফল। তিনি একজন আদর্শ স্বামী, স্নেহশীল পিতা। সৈয়দ আবুল হোসেন পিতা-মাতাকে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আত্মীয়স্বজনদের পর্যাপ্ত সময় দেন। ধনী-গরিব সব প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের খোঁজ খবর রাখেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি একজন সুখী মানুষ। সকালে ওঠেন, দশটার মধ্যে শুয়ে পড়েন। তিনি জানেন,
সৈয়দ আবুল হোসেন ঠান্ডা মেজাজের লোক। কষ্ট বা রাগে হয়ত বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তবু মাথা ঠান্ডা রাখেন। কোনো অবস্থাতে মাথা গরম করেন না। ফলে কথাবার্তা কখনও শালীনতার পর্যায়কে অতিক্রম করতে পারে না। তাই যে কোনো বিপদে তিনি অস্থির নাÑহয়ে চিন্তা ভাবনা করে অগ্রসর হতে পারেন। তাহলে কি তিনি রাগেন না? হ্যাঁ, রাগেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব কতই না বিচক্ষণ-
তিনি আপাদমস্তক কুশলী ও বিচক্ষণতায় মোড়া। এমনভাবে বলেন, যাতে কেউ কষ্ট না-পায়, এমনভাবে দেখেন যাতে কারও মনে দুঃখ বা ভীতির সঞ্চার না হয়; বরং আনন্দ জাগে। কারও সমালোচনা করার সময়ও শালীনতাবোধ বজায় রাখেন। তিনি তর্কে যৌক্তিক, চেতনায় উদার। কথা বলার সময় কোটেশনের পর কোটেশন দিতে পারেন। কথার মাঝে কিছু রস থাকে। যা কথাগুলোকে উপভোগ্য এবং হƒদয়গ্রাহী করে তোলে। তবে ব্যক্তিত্বের হানি হয় না। তিনি রাগ সম্পর্কে তাঁর একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সেটি হল- এতগুলো প্রত্যয়কে সমন্বয় করে রাগ করা পৃথিবীর খুব কম মানুষের পক্ষে সম্ভব। তাঁর চাইতে নিজের রাগকে গোপন রাখাই সর্বোত্তম।
শুধু রাজনীতিক জীবনে নন, সংগঠক হিসেবেও তিনি অনন্য। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানে সোনা ফলেছে। সৈয়দ আবুল হোসেন চিন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার চব্বিশটি দেশ নিয়ে গঠিত অর্থনীতিক সহযোগিতা ফোরাম ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি এ ফোরামের স্পোকসম্যান নির্বাচিত হন। ঢাকা বাণিজ্য ও শিল্প অনুষদ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর উন্নয়ন ও বিকাশে সৈয়দ আবুল হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। ন্যাশনাল ম্যানেজম্যান্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ এলামনি এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন তিনি স্থানীর সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাঁকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ সংসদীয় এলাকা হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর তাঁকে হারানো কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন, ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি তাঁর সংসদীয় এলাকা মাদারীপুর-৩ আসন হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এসেছেন, দেখেছেন এবং জয় করেছেন। তাঁর গুণে জনগণ এতই মুগ্ধ যে, সাধারণ জনগণ প্রত্যেকে নিজেকে সৈয়দ আবুল হোসেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন। তিনি তার কর্ম দিয়ে জনগণের সাথে এমন এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা ছিন্ন করার সাধ্য কারও নেই।
কালকিনির সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, খোয়াজপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, ডাসারের শেখ হাসিনা উইমেন্স একাডেমি এন্ড কলেজ, ডি কে সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমী এন্ড কলেজে শিক্ষাক্ষেত্রে অহঙ্কারের নৈবদ্যিক সংযোজন। তাঁর বৃত্তিতে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল হোসেন সাধারণ পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে ওঠা অসাধারণ একজন মানুষ। যার শেকড় পাতালে, মস্তক কল্পনার আকাশ ছুঁয়ে স্তম্ভিত অপলক।
কেন তিনি শিক্ষাবিস্তারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় এত ব্যাকুল? অনেকে নামের জন্য, প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠান করেন। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের মানসিকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেন তিনি শিক্ষার প্রসারে এত উদগ্রীব তা তাঁর জবানিতেই শোনা যাক :
টলস্টয় বলেছেন- ‘বিদ্যালয়ই উন্নতির মাধ্যম। বিদ্যালয়ই মানুষকে সভ্য করে তোলে।’ এলজিা বফ চমৎকার কথা বলেছেন। তার মতে, ‘বয়স্কদের জন্য কারাগার অথবা ফাঁসিমঞ্চ নির্মাণ করার প্রয়োজন কমে যাবে যদি উত্তম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ আমি মনে করি এর চেয়ে সত্য কথন আর হয় না। বিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জন করলে চরিত্র গঠিত হয়। ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য বোঝা যায়। অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পায়। তাহলে আর কারাগার বা ফাঁসির মঞ্চের প্রয়োজন রইল কোথায়? সুতরাং আমি মনে করি কারগার নির্মাণে মনোযোগ দেয়ার চেয়ে অধিক হারে বিদ্যালয় নির্মাণে, শিক্ষার প্রসারে মনোযোগ দেয়া দরকার। সে কারণেই আর একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, ‘স্কুল তৈরির মতো মহৎ ও কল্যাণকর কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই’। এই চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি আমার সাধ্যমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমি মনে করি, এটা আমার সামাজিক অঙ্গীকার। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আমার কর্তব্য। আমি সিক্ত আমার এলাকার মানুষের ভালোবাসায়। তাদের কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। সেটা আমি শোধ করতে পারি শিক্ষার আলো জ্বেলে বা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ব্যক্তিকে সাহায্যদানের আবেদন সব সময়ই সাময়িক। প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আবেদন কালজয়ী।’
তাহলে গ্রামে কেন? তিনি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রামকে কেন বেছে নিয়েছেন? এর উত্তরও তাঁর জবানিতে শুনতে পারি :
গ্রামই আমাদের আসল ঠিকানা। অথচ এই গ্রাম আজ অবহেলিত। শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। কিন্তু গ্রামের লোকের লেখাপড়ার প্রতি কারও তেমন মনোযোগ নেই। গ্রামের জনগোষ্ঠীর শিক্ষার বিপুল চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যেই আমার প্রয়াস।
আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনের শিক্ষক ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. তমিজ উদ্দিন বলেছেন, “অনেক কর্মপ্রাণ লোক আমি দেখিয়াছি। তাহারা কাজ করিতে করিতে রুক্ষ হইয়া যায়। কাজ করিতে করিতে নিজেরাই যন্ত্র হইয়া যায়। সৈয়দ আবুল হোসেন তেমন ছিল না। সে কাজ করিতে করিতে আরও প্রফুল্ল হইয়া উঠিত। কাজ ছিল তাহার প্রাণ তবে সে প্রাণে ছিল স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, হাসি-কান্না, রস, কৌতুক, বিশ্রাম এবং সুকুমার চিত্ত। ছোট বেলা হইতে দেখিয়াছি জীবন তাহার কাছে কাজের সমষ্টি ছাড়া কিছু নয়। কর্মহীন জীবন তাহার কাম্য নয়। তাই সে কাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়া থাকে। কাজের সাথে আর একটি জিনিসকে সে অবিচ্ছেদ্য রাখে, সেইটি হইল নিষ্ঠা। কর্ম আর নিষ্ঠার মিশ্রণ ঘটাইয়া সে এমন এক শরবত তৈয়ার করিয়াছে, যাহা কেহ পান করিলে পরশপাথর হইয়া যায়। ঐ পরশপাথর যাহারা ধরে, তাহারা আপন মহিমায় হইয়া ওঠে সাফল্যের বর, সাধনার নির্ঘণ্ট।”
সৈয়দ আবুল হোসেন শুধু রাজনীতিক নন, লিডারও বটে। তথাকথিত নেতা নন, নেতার সকল প্রায়োগিক ও তাত্ত্বিক উপাদানে পরিপূর্ণভাবে বিদুষিত একজন মহান নেতা। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ মুহাঃ জালাল উদ্দিনের ভাষায়, একজন নেতার যে সকল গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নেতার যে সকল গুণাবলীকে অনিবার্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার সবটাই সৈয়দ আবুল হোসেনে বিদ্যমান। তিনি কৃতজ্ঞতায় আকাশ। যাদের ভালোবাসায় সিক্ত তাদের জন্য রিক্ত হতে প্রস্তুত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তাঁর অনাবিল চরিত্রের নিখাদ অলঙ্কার। তিনি মনে করেন, কারও প্রতি অভিযোগ নয়, বরং কারও প্রতি বিরক্ত হলে তিনি কৃতজ্ঞতায় সিক্ত হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন।২৪
বন্ধু হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অবলোকন করলে সে বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে যায়- ফ্রেন্ড ইজ বরন, নট মেইড। সৃষ্টিকর্তা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে সেরা জীবন উপভোগের জন্য যে সকল ঐশ্বর্র্য দিয়েছেন তš§ধ্যে বন্ধুই সর্বশ্রেষ্ঠ- সৈয়দ আবুল হোসেনের সাথে বন্ধুত্ব হলে এটিই সবার মনে হবে। ২৫ এ মুহূর্তে এডগার ওয়াটসন হো এর একটি কথা আমার মনে পড়ছে:. এ রকম দেখেছি আমি সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে। সাধারণত কেউ বিপদে পড়লে শুভাকাক্সক্ষীরা এগিয়ে এসে প্রয়োজনের কথা জানতে চান; জানতে চান কী প্রয়োজন, কতটুক প্রয়োজন। সৈয়দ আবুল হোসেনকে আমি এমন সাধারণ শুভার্থীর মতো আচরণ করতে কখনও দেখিনি। কেউ বিপদে পড়লে তিনি এসে যা প্রয়োজন তা করে দিয়ে যান স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো প্রশ্ন নাÑকরে। এটি বন্ধু ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।
সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো বিশাল এক ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ অবয়ব রচনা দূরে থাক, তার কর্মকান্ডের একটি মুহূর্তের প্রকাশও স্বল্প সময়ে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একদিন আমার একটা কথার জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এরপর আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি তা পালনের। পারি না। দূর হতে দেখতে দেখতে কোন্ সময় কখন কিভাবে নিবিড় হƒদ্যতায় একাত্ম হয়ে গেছি, হারিয়ে গেছি জানি না। অতঃপর বুঝতে পারলাম : অমন পরিশুদ্ধ বিশালতায় হারিয়ে যাবার কষ্ট কত আনন্দের। তার প্রত্যয়ী পরিভাষার কোমল লাস্যে প্রেমের সাথে মধুময় জীবনের প্রত্যাশা বৃষ্টির মতো শ্যামল করেছে আমাদের চেতনা ও রাজনীতির জটিল ক্ষেত্র। রাজনীতিক সন্ত্রাস, সংকীর্ণ স্বার্থ, হানাহানি, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সৈয়দ আবুল হোসেনের অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিকে বহুলাংশে পরিশীলিত করতে সক্ষম হয়েছে। অন্তত তাঁর সংসদীয় এলাকার রাজনীতিকে সম্পূর্ণ কুষমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এলাকায় সকল দল, সকল মত, সকল ধর্ম অভিন্ন হƒদ্যে একাকার। তিনি ব্যবহারে বিনয়ী, কর্মে নিষ্ঠ, সিদ্ধান্তে বলিষ্ঠ, আচরণে শিষ্ট, বিচক্ষণতায় ঋদ্ধ, ব্যবস্থাপনায় মার্জিত এবং কৃতজ্ঞতায় অনুপম। পৃথিবীতে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের শুভাগমন ঘটে যারা সূর্যের সাথে হাসে, বৃষ্টির সাথে কাঁদে, ঝর্ণার সাথে গান গায় প্রতি প্রহরে, খেলায় জীবনের চৈতালী সাজাতে চায়। সৈয়দ আবুল হোসেন এমন চরিত্রের অধিকারী একজন বিরল মানুষ।
মানবতাবাদী সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে নিজের পরিবারের সদস্যের মতো মূল্যায়ন করে থাকেন। তিনি তাদের সুখ-দুঃখ ও হাসি-বেদনার সার্বক্ষণিক সাথী। কর্মচারীদের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা রূপকথার গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর। যে ব্যক্তি সাকো ইন্টারন্যাশনালে বিশ বছর চাকুরি করেন তাকে তিনি উপযুক্ত মানের একটি ফ্লাটবাড়ি কিনে দেন। এটি কেন করেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন: যে ব্যক্তি জীবনের বিশটি বছর আমার সাথে কাটিয়ে দেন, তাঁর আর নিজের জন্য কিছু থাকে না। সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান, বেসরকারি কর্মচারীরা কিছু পান না। চাকুরি জীবনের শেষে একটা ফ্লাট পাচ্ছেন এ নিশ্চয়তা তাদের কর্মস্পৃহা ও প্রতিভাকে বিকশিত করবে, পারিবারিক জীবন হবে আনন্দময়, সংগতকারণে তারা নিশ্চিত মনে প্রতিষ্ঠানের সেবা করে যাবার উদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে কাজ করার মানসিকতা পাবে। একজন মানুষ কত দূরদর্শী এবং কত মানবপ্রেমী হলে এমন করতে পারেন, তা সহজে অনুমেয়।
ভিনস্ লেম্বর্ডির একটা কথা মনে পড়ে গেল। তিনি বলেছেন- পাহাড়ের চূড়োয় কেউ পতিত হয় না। পাহাড়ের চূড়োয় উঠতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন শ্রম, মেধা আর প্রয়াস। সৈয়দ আবুল হোসেন খ্যাতির চূড়োয়। তিনি ওখানে পতিত হননি। তলা হতে আস্তে আস্তে চূড়োয় উঠেছেন। এ আরোহণে তিনি কারও সাহায্যের অপেক্ষায় থাকেননি। নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা আর একাগ্রতার মাধ্যমে জয় করেছেন শৃঙ্গ।
বাংলা সাহিত্যের দিকপাল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘সৈয়দ আবুল হোসেন খুবই শ্রদ্ধেয় এবং একজন বিরাট মাপের মানুষ।’ তিনি সময়, মানুষ, রাজনীতি, পারিপার্শ্বিক বলয়, আর্থসামাজিক অনুরণন ও স্বীয় জীবনকে পরিশীলিত মাধুর্যে সমন্বয় করে আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রকে অমিয় মহিমায় উদ্ভাসিত করতে সক্ষম একজন পরিপূর্ণ মানুষ। সময়কে তিনি আধুনিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই তিনি সময়ের পরশপাথর।
মোহাম্মদ আমীন : লেখক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও ইতিহাসবেত্তা।
ছাত্রজীবন হতে সৈয়দ আবুল হোসেন মেধাবী, বুদ্ধিমান ও অমায়িক ছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন বিনয়ী, তেমনি ছিলেন ধীর। শান্তশিষ্ট অথচ তীক্ষè মেধার অধিকারী। তার স্মরণশক্তি ও গ্রহণ ক্ষমতা ছিল অবিশ্বাস্য। একবার কোনো কিছু শুনলে কিংবা দেখলে সহজে ভুলতেন না। স্কুলজীবনে শিক্ষকগণ তাঁকে চলন্ত অভিধান ডাকতেন। পুরো ডিকশনারি ছিল তার নখদর্পণে। গৌরনদী কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মো. তমিজ উদ্দিনের ভাষায়, ‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। মাথা নিচু করে অথচ সটান রাজপুত্রের মতো চলাফেরা করতেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল মোলায়েম ও মার্জিত। কারও সাথে রূঢ় ভাষায় কথা বলতেন না। বিনয়ের সাথে রাজকীয় জৌলুসের মিশ্রণ সৈয়দ আবুল হোসেনকে বিরল মাধুর্যমন্ডিত করে তুলেছিল।’১
অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন সৈয়দ আবুল হোসেনের শিক্ষক। তাঁর ভাষায়, “মানুষ হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেন অত্যন্ত সজ্জন। তিনি নিজের ক্ষতি করতে পারেন, তবে অন্য কারও নয়। সৃষ্টির সব কিছুর প্রতি তিনি মমত্বশীল। আমাদের চারিপাশে যা আছে সব কিছুতে তার দৃষ্টি আলোর মতো অবিরাম, বৃষ্টির মতো স্নাত, বিকেলের রোদের মতো ঈষদুষ্ণ।”২ সৈয়দ আবুল হোসেনের ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনের বন্ধু আব্দুল কাদের সাহেবের ভাষায়, “সৈয়দ আবুল হোসেন সবসময় উচ্ছল, সবসময় আন্তরিক, কথা ও কাজে তাঁর বিন্দুমাত্র ফাঁক থাকে না।” বন্ধু হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ড. এম মান্নান বলেছেন
কৃতজ্ঞতাকে মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট প্রকাশ বলা হয়। সৈয়দ আবুল হোসেন কৃতজ্ঞতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেউ তাঁর সামান্য উপকার করলে তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না। তিনি মনে করেন তিনি প্রতিটি মানুষের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞ। হয়ত তাই কারও ক্ষতি করতে পারেন না।
এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কবীর কথা প্রসঙ্গে একদিন বলেছিলেন, ‘সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনীতিবিদ হয়েও পরম নিরপেক্ষতার ভূষণ। তিনি যখন মন্ত্রীর চেয়ারে বসেন তখন আদর্শ প্রশাসক। পেশাদার প্রশাসকের মতোই নিরপেক্ষ। রাজনীতি বা দলের প্রতি অনুগত থেকে কীভাবে দেশের উন্নয়ন করা যায় সেটিই তাঁর মুখ্য বিষয়। এরূপ নিরপেক্ষতা কেবল বিচারের নিক্তিতে পরিমাপ্য। রাজনীতিক পরিমন্ডলে রাজনীতিক পদ বিন্যাসে কোনো দেশের সংসদের স্পিকারকে সবচেয়ে বেশি নিরপেক্ষ থাকতে হয়। সৈয়দ আবুল হোসেন স্পিকার নন, তবু তাঁর নিরপেক্ষতা সর্বাঙ্গীন সুন্দর। তাঁর ভাষা, কথা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব অসাধারণ। যে কোনো মুহূর্তে যে কোন বিষয়ের উপর যে কোনো প্রশ্নের এমন উত্তর দেন যা প্রশ্নকারী, শ্রোতা এবং পক্ষ-বিপক্ষ সবাইকে সন্তুষ্ট করার উপাদানে ভরপুর থাকে। কারও প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পায় না।’ ছাত্রজীবনেও তিনি ছিলেন ন্যায়বান ও নিরপেক্ষ। ডাসার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হলে সবাই সৈয়দ আবুল হোসেনকে বিচারক মানত এবং তিনি নিরপেক্ষভাবে ন্যায়ভিত্তিক সমাধান দিতেন।৪ এ গুণটা তাঁর মাঝে এখন আরও বেশি পরিদৃষ্ট হয়। সন্ত্রাসী সে যেই হোক না কেন, নিজের ভাই হলেও ছাড় দেন না। ফলে তার নির্বাচনী এলাকায় কোনো সন্ত্রাস নেই বা দলবাজি কিংবা কোন্দল নেই।
কালকিনিতে তিনি অজাতশত্রু। মাদারীপুরে অবিসংবাদিত নেতা। মন্ত্রণালয়ে দূরদর্শী মন্ত্রী, বিচক্ষণ প্রশাসক এবং সমগ্র বাংলাদেশে মার্জিত চরিত্রের অধিকারী একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালের মতে, ‘দলের প্রতি নিবেদিত এমন নেতা খুব কম আছে। গৌরবময় কর্মের মাধ্যমে তিনি সতত উজ্জ্বল।’ কালকিনির সংখ্যালঘুরা তাকে বলেন দেবতা; বিরোধী দলের লোকেরা মনে করেন বন্ধু, নিরাপদ আশ্রয়। তিনি আওয়ামী লীগ করেন। আওয়ামী লীগ কারও নিজস্ব দল নয়, আমজনতার দল। বঙ্গবন্ধু এভাবে চিন্তা করতেন। বঙ্গবন্ধুর নিবিড় অনুসারী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে দল নয়, দেশই বড়। মানুষ নয়, কর্মই বিবেচ্য।
সহানুভূতি মানব জীবনের একটি অনবদ্য গুণ। খুব কম প্রাণীর মধ্যে এটি দেখা যায়। একজন মানুষের মনুষ্যত্ব যে বিষয়টা দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিস্ফুট হয়, সেটি সহানুভূতি। সৈয়দ আবুল হোসেন সহানুভূতির এক অনুপম দৃষ্টান্ত। এ প্রসঙ্গে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- অশীতিপর বৃদ্ধ মবিন হাওলাদার লাঠিতে ভর করে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায়। এ সময় সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অনেক শিশু ডাসার প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বাড়ি ফিরছিল। বৃদ্ধের পতন দেখে সবাই হেসে ওঠে। সৈয়দ আবুল হোসেন হাসলেন না, তার চোখ জলে ছল ছল করে উঠল। বইগুলো মফিজুল হকের হাতে দিয়ে লোকটাকে তুলে দিলেন।
এ রকম আর একটি ঘটনা সৈয়দ আবুল হোসেনের স্কুলজীবনের সঙ্গী লাল মিয়ার জবানিতে শোনা যেতে পারে- এলাকায় সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিবার ছিল তুলনামূলকভাবে সচ্ছল। খরচার জন্য টাকা দিলে সে নিজে খরচ করত না। গরিবদের দিয়ে দিত। যাদের বই নেই তাদের বই কেনার জন্য সাহায্য করত। একদিন আমরা ঝড়ে আম কুড়োচ্ছিলাম। সে তিনটা আম পেয়ে বাড়ির দিকে চলে আসছে। এ সময় একটা ছেলে আম পায়নি বলে কাঁদছিল। আবুল হোসেন তা দেখে সবগুলো আম ছেলেটিকে দিয়ে দিয়েছিল। ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে। তখন আবুল হোসেন ক্লাশ ফাইভে। এক জেলের কাছ হতে মাছ কিনল। জেলে দাম বলল: ‘দাম দশ টাকা।’ জেলের কথামতো আবুল হোসেন জেলের হাতে দশ টাকা দিয়ে বলল: ‘আপনার আর কোনো পাওনা আছে?’ জেলে অবাক হয়ে আবুল হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘তুমি একদিন অনেক বড় হবে।’ জেলের আশীর্বাদ ফলেছে।৭ তিনি বিবাহের পূর্বেই হজব্রত পালন করেছিলেন। সাথে ছিলেন প্রাণপ্রিয় জননী। মক্কা-মদিনার দীর্ঘপথে বাসে একজন যাত্রী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পথিমধ্যে ঐ অসুস্থ যাত্রীকে হাসপাতালে নেয়ার ঝামেলা কেউ গ্রহণ করতে আগ্রহ দেখালেন না। যুবক সৈয়দ আবুল হোসেন মাঝপথে নেমে ঐ অসুস্থ যাত্রীর চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
সময়বোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার উজ্জ্বল আলেখ্য সৈয়দ আবুল হোসেন। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সফিক আলম মেহেদির ভাষায়, “এত চেষ্টা করেও মন্ত্রী মহোদয়ের পূর্বে অফিসে আসতে পারিনা। তিনি আসেন সাড়ে নয়টায়, অথবা যখন আসার কথা তখন; এক সেকেন্ড এদিক ওদিক হয় না। রাজনীতি করেন, নিজস্ব অফিস করেন, সভা-সমিতি করেন, দর্শনার্থীদের সময় দেন; পরিবার-পরিজন দেখেন- এতকিছুর পরও সবকিছু কীভাবে যথাসময়ে করেন ভেবে বিস্মিত হই।” তাঁর সময়ানুবর্তিতার একটি ঘটনা সড়ক ও রেলপথ বিভাগের যুগ্মসচিব জনাব মো. মোস্তফার ভাষায় শোনা যেতে পারে- ২০০৯ এর সেপ্টেম্বর/অক্টোবর-এর দিকে মন্ত্রী মহোদয় সরকারি সফরে দক্ষিণ কোরিয়া হতে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করলেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে হতে রাত প্রায় তিনটা। বিমানবন্দরে আমাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা অনেকেই ধরে নিয়েছিলাম যে হয়ত তাঁর পরের দিন নিত্যকার অভ্যাসমতো সকাল নয়টার মধ্যে সকল কর্মকর্তাদের সাথে মন্ত্রী মহোদয়ের যে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হওয়ার কথা, তা হবে না। ফলে আমার মতো বেশ কয়েকজন রাতের ক্লান্তি-শ্রান্তির কারণে সকাল নয়টার বেশ পরে মন্ত্রী মহোদয়ের কক্ষে উপস্থিত হই। আর তখনই বিস্ময়ের ধাক্কা। জানলাম, মন্ত্রী মহোদয় নিত্যকার অভ্যাসের কোনো ব্যত্যয় ঘটাননি। অর্থাৎ তিনি সকাল নয়টার পূর্বেই অফিসে উপস্থিত হয়েছেন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যিনি সর্বদাই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চলে এসেছেন সাফল্যের সোনালি সবুজ হরিণ তো তাঁরই করায়ত্ত্বে থাকবে- এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অনেক লোক আছে তাদের সবসময় ব্যস্ত দেখা যায়, অথচ কাজের মতো কোনো কাজ থাকে না, করে না। সৈয়দ আবুল হোসেন মনে করেন, ব্যস্ততা কাজের অনুষঙ্গ। এটি দেখানোর কিছু নয়, কাজ করতে করতে ব্যস্ততা নীরবে চলে আসে। তাই সব কিছু ধীরস্থিরভাবে করা উচিত। প্রথমে বেছে নিতে হবে পছন্দ। তারপর বিবেচনা, অতঃপর সিদ্ধান্ত এবং সবার শেষে কার্য। সৈয়দ আবুল হোসেন মনে করেন, তাই তিনি অসংখ্য কাজের মধ্য হতে গুরুত্বপূর্ণগুলো বেছে নেন।
কর্মে তিনি গণিতের মতো আক্ষরিক, চিন্তায় সময়ের মতো গতিশীল, ভালোবাসায় প্রকৃতির মতো লাস্যময়, স্নেহে পিতার মতো সুবিনয়; বিপদে ধরিত্রীর মত ধৈর্যশীল। তিনি আগামীকালের অপেক্ষায় থাকেন না, ওটি কখনও আসে না। আবার সাফল্যের জন্যও অপেক্ষা করেন না। সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় তাঁর নেই। তাই সাফল্য ছাড়াই তিনি এগিয়ে চলেন। বাধ্য হয়ে সাফল্যই তাঁর পিছু নেয়। তিনি লক্ষ্যে স্থির। কোথাও তাড়াতাড়ি পৌঁছার চেষ্টা করার আগে কোথায় যেতে হবে এবং কীভাবে যেতে হবে সেটিই আগে স্থির করে নেন। তাই তাঁর লক্ষ্য চ্যুত হয় না, সময় অপচয় হয় না। তিনি অতীতের জন্য আফশোস করেন না এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে অস্থিরও হন না। তাই সর্বক্ষণ অবিচল থাকতে পারেন। সৈয়দ আবুল হোসেন মিতভাষী। অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন না। কর্ম, জয়-পরাজয় ও ত্যাগ এ ত্রয়ী সমন্বয়ে জীবনের প্রতিটি বিষয়কে উপভোগ করেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নির্মল আনন্দে। লক্ষ্য ভেদকে সৈয়দ আবুল হোসেন গন্তব্যস্থল মনে করেন না, মনে করেন পরবর্তী যাত্রার হাতছানি। পথ যত লম্বা হোক তার নজর সেদিকে পড়ে না। তিনি বিশ্বাস করেন, যার আরম্ভ আছে তার শেষও আছে। অসীমতার শুরু বিন্দু হতে। যেখানে পুরাতনের শেষ সেখানে নতুন কিছুর শুরু। পুরাতনের জন্য অহেতুক কান্না সময় নষ্ট ছাড়া কিছু নয়। যা হবার হবে, এতে বিচলিত হয়ে লাভ কী!
জীবনকে কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে সততার সাথে পরিচালনা করেন বলে তাঁর মুখে হাসির ছটা বৈকালিক প্রহরের মতো লেগে থাকে। তাঁর কাজ মমতায় জীবন্ত, শাসনবিন্দু রূপোলি আলোর মতো মুগ্ধকর। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কলামিস্ট, সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী, সংগঠক, লেখক, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এতগুলো প্রত্যয়কে নিয়েও তিনি পথ চলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ব্যাঘাত ঘটে না সংসার জীবনের। সময় দেন সবাইকে যার যেমন প্রাপ্য। উপস্থিত হন যেখানে প্রয়োজন। সৈয়দ আবুল হোসেনের কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মপ্রবণতার উদাহরণ টানতে গিয়ে তরুণ তপন দেওয়ান বলেছেন, ‘যেখানে এক পদ্মা সেতুই যে কোনো লোকের ঘুম হারাম করে দিতে পারে, সেখানে পদ্মা সেতুর বাড়তি চাপ নিয়ে এত বড় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বহুমাত্রিক কাজের মনিটরিং করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। অথচ তিনি (সৈয়দ আবুল হোসেন) তা খুবই চমৎকারভাবে করে যাচ্ছেন। এত কর্মযজ্ঞের মাঝেও মুখের হাসির মলিনতা নেই।১০ এর কারণ হচ্ছে ডগবার্ট ডি রিউনেস এবং জর্জ স্যান্ড এর ন্যায় তিনিও মনে করেন-
সময়কে যদি কর্মের মাধ্যমে প্রগতিভূত সৃষ্টির প্রতি অনুগত রেখে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য অধ্যবসায়-প্রসূত অদম্যতা বিমূর্ত করা যায়, তাহলে সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির কাছে কোনো কিছু অসম্ভব নয়। কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সময়ের প্রতি সতর্কতা শেখার প্রতি আগ্রহ, সৃষ্টির প্রতি প্রেম, মানুষের প্রতি ব্যবহার দিয়ে যদি কোনো ব্যক্তিকে বিচার করা হয়, তাহলে সৈয়দ আবুল হোসেন নিঃসন্দেহে একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ।১১ আমি মনে করি, তিনি এমন একটি বড় মনের অধিকারী যিনিÑ প্রবাদটি অনুক্ষণ মনে রেখে পথ চলেন। নইলে এমন উদারতা কীভাবে বর্ষণ করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব! তিনিও তো অন্যান্য মানুষের মতো রক্তমাংশের অধিকারী।
সৈয়দ আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক। জাতির দুঃসময়ে আপন বলয়ে সামর্থ্যরে পূর্ণ ডালা নিয়ে এগিয়ে যান মানুষের প্রয়োজনে, জাতির কল্যাণে। উজাড় করে দেন নিজের সামর্থ্য। মানিকগঞ্জ ও সাটুরিয়া এবং ১৯৮৮ ও ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে মহাবন্যায় দুর্গত মানুষের প্রতি উজাড় করে দিয়েছিলেন বিত্ত ও চিত্ত। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির প্রতি অবিচল আস্থা এবং প্রগাঢ় শ্রদ্ধা তাঁর অস্থিমজ্জার অংশ। এ বিশ্বাসে অবিচল থেকে দেশের কল্যাণে, মানুষের মঙ্গলে উদাত্ত মাধুরিমায় স্বাধীনতার স্বাদকে পরিপূর্ণ আনন্দে উপভোগের ক্ষেত্র প্রস্তুতে তিনি প্রতিনিয়ত ঐকান্তিক। শিক্ষাবিস্তারকে তিনি জাতি বিনির্মাণের মূল নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শিক্ষা ছাড়া উন্নয়ন, উন্নয়ন ছাড়া সভ্যতা এবং আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ছাড়া স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায় না। তাই সৈয়দ আবুল হোসেন শিক্ষাবিস্তারে নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতির মতো অশেষ বিভবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার অনাবিল সম্মান, শ্রদ্ধাময় ভালোবাসা ও অবিচ্ছিন্ন সহানুভূতি মুক্তিযুদ্ধের পরও থেমে থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা চরম আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। সৈয়দ আবুল হোসেন উদার মমতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পাশে ছুটে এসেছিলেন। গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়েছিলেন গৃহ, বস্ত্রহীনে বস্ত্র, খাদ্যহীনে খাদ্য। চিকিৎসার জন্য অনেক মুক্তিযোদ্ধা দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। অনেকে টাকার অভাবে সোমত্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলেন না। সৈয়দ আবুল হোসেন নিজ তহবিল হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের সকল অভাব পূরণ করেছিলেন। সে সময় তিনি অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের হারানো মনোবলকে চাঙ্গা করেছিলেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা এস্কান্দর শিকদারের ভাষায়, ‘আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেন আমাদের পাশে বটবৃক্ষের ন্যায় দাঁড়িয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন- ভয় নেই, আমি আপনাদের পাশে আছি। তিনি এখনও আমাদের পাশে আছেন। আমরা প্রতিনিয়ত তার নেতৃত্বে জাতির উন্নয়নের জন্য নতুন আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধ করে যাচ্ছি। এ যুদ্ধ উন্নয়নের, শিক্ষার, প্রগতির এবং অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোয় উৎসারিত হবার।১২
কর্মস্থলে তিনি অমায়িক বাৎসল্যে পরিশুদ্ধ একটি আলোকবর্তিকা। সৈয়দ আবুল হোসেনের সংস্পর্শ সবাইকে পরশপাথরের মত বদলে দেয়, গড়ে তুলে নতুন ভাবনার চিরন্তন সৌকর্যে। তিনি বলেন কম, প্রকাশ করেন অধিক। শোনেন বেশি, শুনান কম। আইন-কানুন, বিধি-বিধান, রাষ্ট্র ও প্রশাসন সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয়ে তার সম্যক জ্ঞান রয়েছে। যা প্রয়োজন হতে পারে তা তিনি পূর্বাহ্নে হƒদয়ঙ্গম করে আলোচনায় আসেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাবার আগে প্রয়োজনীয় সকল অস্ত্র নিয়ে নামেন। পরাজয় স্বাভাবিক, তাই বলে পরাজয়কে বিনা প্রতিরোধে মেনে নেয়ার পাত্র তিনি নন। পরাজয় তাঁকে আহত করে না, বরং নব-প্রত্যয়ে দীপ্ত করে। ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে ভুলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অবলীলায়। তাঁর ভাষায়, ‘আই এ্যাম এ সেল্ফমেইড ম্যান, আই থিংক এভরিওয়ান ক্যান রিচ, হোয়ার আই এ্যাম; শো আই হ্যাভ রেসপেক্ট ফর অল।’
জননেত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় সান্নিধ্য সৈয়দ আবুল হোসেনের অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধু তাঁর আদর্শ, শেখ হাসিনা রাজনীতিক গুরু এবং আদর্শিক অভিভাবক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও শেখ হাসিনার স্নেহধন্য সৈয়দ আবুল হোসেন আওয়ামী লীগকে নিজের চেয়েও পরম মমতায় লালন করেন। ওয়ান-ইলিভেনের পর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য তাঁর ভূমিকা ও বুদ্ধিমত্তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাকানো ষড়যন্ত্রে অংশ নাÑনেয়ায় তাঁকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তবু তিনি মাথা নোয়াননি। তাঁর পরিষ্কার উক্তি, জীবন দেবো তবু নেত্রীর প্রতি আনুগত্য হতে এক চুল নড়ব না।১৪ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলকে প্রচুর অর্থ আর উপদেশ দিয়ে সহায়তা করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে তার নিরলস শ্রম ও ব্যয় চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।১৫ দেশ গঠনে সৈয়দ আবুল হোসেনের ভূমিকা বিশাল পরিব্যাপ্ততায় নির্ভরতার বৈপ্লবিক অহঙ্কার।
মার্জিত ভাষা ও সুললিত কণ্ঠের অধিকারী সৈয়দ আবুল হোসেনের কণ্ঠ যেমন মুগ্ধকর তেমনি অনাবিল, মধুময়। প্রতিটি বাক্য অকাট্য যুক্তির নির্যাস; স্পষ্ট এবং অর্থবহুল। অপ্রয়োজনীয় কথা বলাকে তিনি অপ্রয়োজনীয়ভাবে বুলেট ছোড়ার সামিল মনে করেন। যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান ও ব্যক্তি নির্বাচনে তাঁর জুড়ি নেই। প্রাক্তন সচিব সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরীর ভাষায়: কোনো ব্যক্তিকে কি দায়িত্ব দিতে হবে তা তিনি লোকটিকে এক পলক দেখেই বুঝে নিতে পারেন।
নিরহঙ্কারী মানুষ ও সহনশীল রাজনীতির প্রবক্তা সৈয়দ আবুল হোসেন স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার নজরে নমস্য বিমূর্ততায় অভিভূত হয়ে উঠেছেন। বহুমুখী তার যোগ্যতা। তিল তিল পরিশ্রমে সাকো ইন্টারন্যাশনালের মতো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও নিতান্তই অনাড়ম্বর। ব্যবসার মতো রাজনীতিতেও ঈর্ষণীয় সাফল্যের অধিকারী। তবু নির্লোভ। যার লোভ নেই, তিনি সবার কাছে লোভনীয়, আকর্ষণীয়। মন্ত্রণালয়ে সচিব হতে শুরু করে পিয়ন, গ্রামে ধনী হতে শুরু করে ভিক্ষুকÑ সবার প্রতি সমভাবালুতা সৈয়দ আবুল হোসেনের মহানুভবতার অনাবিল প্রমাণ।১৬
সৈয়দ আবুল হোসেন আপাদমস্তক পরিচ্ছন্ন। অনুপম শৈলীকলার সহনশীল সমসত্তায় নিগূঢ় তাঁর প্রতিভা। তবে কিছুটা লাজুক; নিভৃতচারী ও প্রচার-বিমুখ। কর্মে তিনি এত বিশ্বাসী যে, প্রচার নামক বিষয়টি তেমন দাগ ফেলতে পারে না। কাঠ নিজে পুড়ে অন্যকে আলো দেয়, ফুল-ফল ও সবুজের সম্ভার মাটির অবদান। কিন্তু মাটির খবর কেউ রাখে না। ঠিক তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেন। অনেক কিছু করেও তিনি নিজেকে সাধারণ ভাবেন। শিক্ষা, উন্নয়ন, সংগঠন, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, পরিবেশ, প্রশাসন ইত্যাদিসহ আর্থসামাজিক পরিমন্ডলের সর্বক্ষেত্রে তাঁর অবদান কীর্তিময়তায় ধ্র“ব। জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ নাÑকরার শর্তে বললেন, তিনি যেখানে যান সেখানে একটি পরম আবহ সৃষ্টি করেন, সৃষ্টি করেন অনুকূল পরিসঞ্চালন। মানুষের মন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মোহনীয় হয়ে ওঠে। তাই তিনি অসাধারণ হয়েও সাধারণ, সাধারণ হয়েও অসাধারণ।’১৭ ‘বাতাস ছাড়া মানুষ এক মুহূর্ত বাঁচতে পারে না। কিন্তু বাতাস আছে বলে আমরা তাঁর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারি না। বাতাস না থাকলে বোঝা যেত, এটি কী। ঠিক তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেন দেশের জন্য আমাদের কালকিনির জন্য কত প্রয়োজন এটি সেদিনই অনুধাবন করা যাবে যেদিন তিনি থাকবেন না।’
সারা বাংলাদেশে সৈয়দ আবুল হোসেন একটি পরিচিত মুখ। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর উদার একাগ্রতা সর্বমহলে প্রশংসিত। শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সৈয়দ আবুল হোসেনের অনুধ্যায়ী চেতনার উজ্জ্বল প্রকাশ। তৃতীয় বিশ্বে তাঁর মতো উদার লোক খুব কম আছে। বাংলাদেশে অনেক লোক আছে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি বিত্তের অধিকারী কিন্তু তাঁর মতো চিত্তের অধিকারী নাÑহলে তো আর নিজের কষ্টার্জিত অর্থ এমন মহান উদারতায় দান করা যায় না। সার্বিক কর্মকান্ড বিবেচনায় আমেরিকার বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথা শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মানুষ পদকে ভূষিত করে। শিক্ষা বিস্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শেরে-বাংলা পদক, জাতীয় পুরস্কার, অতীশ দীপঙ্কর পদক এবং মোতাহার হোসেন পদক ছাড়াও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনের কথা, আচরণ কিংবা ব্যবহারে প্রতিপক্ষ কখনও আহত হন না। তিনি কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বলেন না। সংসদে, মাঠে, রাজনীতিক মঞ্চে, অফিসে, মন্ত্রণালয়েÑ সবখানে তিনি অমায়িক, মার্জিত। কেউ তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও তিনি ক্ষুব্ধ হন না। তিনি ‘রাগ ও ক্ষুব্ধতাকে’ পাগলামির নামান্তর মনে করেন। অনেক সময় অনেকে তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তিনি থাকেন সাবলীল, সহাস্য। এরূপ হাসি দিয়ে তিনি কত রাগান্বিত লোকের হƒত স্বাভাবিকতা পুনরায় ফেরত দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। কৃতজ্ঞতা তাঁর চরিত্রের আর একটি বিশেষ গুণ। কেউ তাঁর সামান্য উপকার করলে তিনি তা কথা, কাজ আর নিষ্ঠা দিয়ে অসংখ্যভাবে ফেরত দিয়ে দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, যাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল আকাশের চেয়ে বিশাল, সে মহামানবের কন্যার মন্ত্রীসভার সদস্য এবং তাঁর পাশে বসে দেশ পরিচালনায় অংশ নিতে পারার সুযোগকে তিনি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।১৮ এ মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার প্রত্যয় তাঁকে প্রতি মুহূর্ত সচেতন রাখে, সতর্কতায় বিচক্ষণ রাখে।
শিক্ষক সমাজকে তিনি সবসময়েই অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকেন। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯৪ সালের ঢাকার রাজপথে অবস্থান ধর্মঘটের সময়ে তিনি তাদের জন্য তাঁবু ও খাবার-দাবারের আয়োজন করেন। একজন শিক্ষক ইন্তেকাল করলে তিনি তার সন্তান-সন্ততির শিক্ষা ও পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন। যা দেশবাসীর সামনে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। মন্ত্রী হলেও তিনি তাঁর শিক্ষকদের দেখলে এখনও পায়ে ধরে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর শিক্ষক ভক্তি দেখে আপ্লুত হয়ে তার এক শিক্ষক বলেছেন, “জানি না পৃথিবীর ইতিহাসে কয়জন শিক্ষক সক্রেটিস হইবার জন্য আলেকজান্ডার পাইয়াছেন তবে আমি পাইয়াছি। আমি সক্রেটিস না হইতে পারি, আমার ছাত্র সৈয়দ আবুল হোসেন আমার জন্য বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার।” শিক্ষকদের অবদান তিনি অত্যন্ত সম্মানের সাথে স্মরণ করে থাকেন এবং প্রায়শ বলেন :
গুরু যদি এক বর্ণ শিষ্যরে শিখায় কোনোদিন,
পৃথিবীতে নেই দ্রব্য যা দিয়ে শোধ দিবে ঋণ।
অনেকে রাজনীতি করেন ক্ষমতার জন্য, ভোগের জন্য। সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনীতি করেন ত্যাগের জন্য, উন্নয়নের জন্য। রাজনীতিতে আসার পর তিনি রাজনীতি হতে এক পয়সাও লাভবান হননি বরং তাঁর আগমন বাংলাদেশের রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে, পরিশুদ্ধ করেছে। পরের ধনে পোদ্দারি কি রাজনীতি? আমাদের দেশে রাজনীতি মানে পরের ধনে পোদ্দারি, ছোট ছোট জনগণের বিন্দু বিন্দু ক্ষমতা জড়ো করে অধিকাংশ রাজনীতিক জনগণের উপর পোদ্দারি করেন। সৈয়দ আবুল হোসেন এমন একজন মানুষ যিনি জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিয়ে পুরো নিঃস্ব হবার প্রত্যয়ে দৃপ্ত। নিপাট অধ্যবসায়, প্রগাঢ় মনোনিবেশপ্রসূত অভিজ্ঞান ও কৃতজ্ঞতার তিলোত্তম মহিমায় বিভূষিত এবং অভাবনীয় অন্তর্দৃষ্টি ও যৌক্তিক মিথষ্ক্রিয়ার মাঝে সত্য-মিথ্যা ও বাস্তবতাকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এক অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে সৈয়দ আবুল হোসেনের। তাই তিনি পা হতে মাথা পর্যন্ত মননে-দর্শনে পরিপূর্ণ আদর্শের অনুসরণীয় একজন আকর্ষণীয় নেতা।
সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনীতিবিদ, তবে গতানুগতিক নন। তিনি যুক্তিতে অমিয়, বস্তুনিষ্ঠায় অনুপম। বাংলাদেশে তিনি সহনশীল রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। রাজনীতির মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বীর গলা জড়িয়ে ধরতে পারেন পরম ভালোবাসায়, নিবিড় শ্রদ্ধায়। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কোনো দলবাজি নেই। উন্নয়ন ছাড়া তিনি কিছু বোঝেন না, ভালোবাসা ছাড়া কিছু অনুভব করেন না। তাঁর ভোটারগণও তাঁর প্রতি অনুরূপ অনুরক্ত। তারা সৈয়দ আবুল হোসেন ছাড়া আর কিছু বোঝেন না। তাই নির্বাচনী এলাকায় নাÑগিয়েও তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন ছিল তাঁর জীবনের প্রথম সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন প্রচারণার জন্য শুধু একদিন এলাকায় গিয়েছিলেন। তাতেই প্রতিপক্ষকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রাক্তন সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ওয়ালীউল্লাহর ভাষায়, ‘আমাদের চাঁদ প্রয়োজন। তবে চাঁদকে কোলে নিয়ে বসে থাকার জন্য নয়; জ্যোৎস্নার জন্য। সূর্য নয় সূর্যের আলো সবার কাম্য। সূর্য দূরে না কাছে, এটি বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য হচ্ছে আলো। তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেন এলাকায় কম যান নাকি বেশি যান সেটি আলোচ্য হতে পারে না। আলোচ্য বিষয় তিনি এলাকার জন্য কি করেছেন এবং করছেন। তিনি তাঁর অবস্থান থেকে অর্জিত উর্বরতা কালকিনিতে প্রতিনিয়ত সরবরাহ করছেন। সূর্যের মতো তাঁর আলো সতত বিস্তৃত সর্বত্র।’
আবেগের কাছে নয় বরং আবেগই তাঁর বশ্য। আবেগ যাঁর কাছে বশ্যতা স্বীকার করে তিনি অসাধারণ। এমন মানুষ ঋদ্ধতার আকাশ, উদারতার মুগ্ধতায় সবুজ প্রান্তর আর ফুলেল চাদরে আবৃত রাশ রাশ প্রশান্তি। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা অধিকাংশ রাজনীতিবিদের স্বাভাবিক চরিত্র। সৈয়দ আবুল হোসেন কখনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না। বরং সিদ্ধান্তই তাকে বাস্তবতার বিমূর্ত বিকেলের মতো নন্দিত করে তোলে। তাই তাঁর সিদ্ধান্তগুলো সব সময় নিবিড় মাঠের গভীর মাটির সোঁদা গন্ধের মতো নান্দনিক হয়ে ওঠে। যুক্তিগ্রহণ মানসিকতা, ঔদার্যময় প্রেরণা ও যথামূল্যায়নের কার্যকর দক্ষতা তাঁকে সংকট মোকাবেলায় অলৌকিক ব্যক্তিত্বে রূপায়িত করেছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো বিশাল ও স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তাঁর আচরণ ও কথাবার্তায় কোনো অহংবোধ কিংবা অশালীনতা প্রকাশ পায়নি।
ধর্ম সম্পর্কে তাঁর ধারণা, অভিব্যক্তি ও বিশ্বাস যেমন উদার তেমনি প্রজ্ঞাময়। তিনি মুসলমান, বিয়ের পূর্বে হজ করেছেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। তাঁর শরীরে হযরত আলীর রক্ত। তবে তিনি অসাম্প্রদায়িক। তাঁর ভাষায়, ‘চূড়ান্ত বিশ্লেষণে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলেই একই স্রষ্টার সৃষ্টি। মানবতার চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই। আমি সে মানবতায় বিশ্বাসী। চিন্তা ও চেতনায়, কাজে ও কর্মে একজন মানবতাবাদী ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে আমার অবস্থান। সে ভাবেই আমি শিক্ষা পেয়েছি। সেভাবেই জীবন গড়েছি। মনুষ্যত্বের পরিচয়েই আমি মানুষকে বিচার করে থাকি। আমার কাছে সবসময় মানুষই বড়। আমার ব্যবহারিক জীবনেও এ আদর্শই আমি সবসময়েই অনুসরণ করে আসছি।’২০ তিনি আরও বলেন, ‘একটি অসাম্প্রদায়িক খাঁটি বাঙালি পরিবেশে আমি মানুষ হয়েছি এবং সেই শিক্ষাই ধারণ করে চলেছি। সেই শিক্ষাই ধারণ করে চলব আমৃত্যু। সেই শিক্ষাই আমাকে প্রণোদিত করেছিল, উদ্বুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে।’২১ তাঁর দৃঢ় ঘোষণা, ‘
নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা রক্ষায় সৈয়দ আবুল হোসেনের আন্তরিকতা সতত প্রশংসনীয়। নারী শিক্ষার প্রসারে তিনি নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা একাডেমি এন্ড উইমেন্স কলেজ। ঐ কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের যাবতীয় ব্যয়ভার সৈয়দ আবুল হোসেন নিজেই বহন করেন। নারী ও নারীশিক্ষার প্রতি সৈয়দ আবুল হোসেনের দরদ প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর এক বাল্যবন্ধু বলেন, ‘কোনোদিন তাকে আমি কোনো মেয়ের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে দেখিনি। কোনো মেয়ের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করতেও দেখিনি। সে এগুলো প্রচন্ড ঘৃণা করত। নারীর প্রতি এত মর্যাদা দিতে আর কোনো মানুষকে আমি দেখিনি। নারী শিক্ষার জন্য তাঁর আগ্রহ নারীর প্রতি মর্যাদা ও তাদেরকে আর্থসামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহের প্রমাণ বহন করে। সে এখন নারীশিক্ষার জন্য অনেক স্কুল কলেজ ও কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।’২২
অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি এত সচেতন এবং এত নিষ্ঠাবান যে, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর সকল পথ অবারিত হয়ে যায়। তিনি যা বলেন মেপে, যা করেন ভেবে। প্রত্যেকটি কাজ নিবিড় পর্যক্ষেণ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সম্পন্ন করেন। তিনি বিনয়ী, ভদ্র ও মার্জিত। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হয় কোমল; প্রকৃতপক্ষে আপোষহীন চেতনায় অনড় একটি ভীষণ হিমালয়, যদি সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যত্যয় ঘটে। তাঁর জীবনের অনেক ঘটনা এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ।২৩ বাংলাদেশে তাঁর চেয়ে অনেক ধনী ব্যবসায়ী, অনেক বড় রাজনীতিবিদ আছেন; কিন্তু কে কয়টা সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মতো আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন!
সৈয়দ আবুল হোসেনের সমাজ চিন্তার মতো পরিবার চিন্তাও অত্যন্ত উদার এবং নিবিড়। তিনি মনে করেন, ঞযব ভধসরষু রং ঃযব হঁপষবঁং ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ. রাজনীতিক ও সামাজিক জীবনের মতো পারিবারিক জীবনেও তিনি সফল। তিনি একজন আদর্শ স্বামী, স্নেহশীল পিতা। সৈয়দ আবুল হোসেন পিতা-মাতাকে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আত্মীয়স্বজনদের পর্যাপ্ত সময় দেন। ধনী-গরিব সব প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের খোঁজ খবর রাখেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি একজন সুখী মানুষ। সকালে ওঠেন, দশটার মধ্যে শুয়ে পড়েন। তিনি জানেন,
সৈয়দ আবুল হোসেন ঠান্ডা মেজাজের লোক। কষ্ট বা রাগে হয়ত বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তবু মাথা ঠান্ডা রাখেন। কোনো অবস্থাতে মাথা গরম করেন না। ফলে কথাবার্তা কখনও শালীনতার পর্যায়কে অতিক্রম করতে পারে না। তাই যে কোনো বিপদে তিনি অস্থির নাÑহয়ে চিন্তা ভাবনা করে অগ্রসর হতে পারেন। তাহলে কি তিনি রাগেন না? হ্যাঁ, রাগেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব কতই না বিচক্ষণ-
তিনি আপাদমস্তক কুশলী ও বিচক্ষণতায় মোড়া। এমনভাবে বলেন, যাতে কেউ কষ্ট না-পায়, এমনভাবে দেখেন যাতে কারও মনে দুঃখ বা ভীতির সঞ্চার না হয়; বরং আনন্দ জাগে। কারও সমালোচনা করার সময়ও শালীনতাবোধ বজায় রাখেন। তিনি তর্কে যৌক্তিক, চেতনায় উদার। কথা বলার সময় কোটেশনের পর কোটেশন দিতে পারেন। কথার মাঝে কিছু রস থাকে। যা কথাগুলোকে উপভোগ্য এবং হƒদয়গ্রাহী করে তোলে। তবে ব্যক্তিত্বের হানি হয় না। তিনি রাগ সম্পর্কে তাঁর একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সেটি হল- এতগুলো প্রত্যয়কে সমন্বয় করে রাগ করা পৃথিবীর খুব কম মানুষের পক্ষে সম্ভব। তাঁর চাইতে নিজের রাগকে গোপন রাখাই সর্বোত্তম।
শুধু রাজনীতিক জীবনে নন, সংগঠক হিসেবেও তিনি অনন্য। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানে সোনা ফলেছে। সৈয়দ আবুল হোসেন চিন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার চব্বিশটি দেশ নিয়ে গঠিত অর্থনীতিক সহযোগিতা ফোরাম ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি এ ফোরামের স্পোকসম্যান নির্বাচিত হন। ঢাকা বাণিজ্য ও শিল্প অনুষদ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর উন্নয়ন ও বিকাশে সৈয়দ আবুল হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। ন্যাশনাল ম্যানেজম্যান্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ এলামনি এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন তিনি স্থানীর সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাঁকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ সংসদীয় এলাকা হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর তাঁকে হারানো কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন, ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি তাঁর সংসদীয় এলাকা মাদারীপুর-৩ আসন হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এসেছেন, দেখেছেন এবং জয় করেছেন। তাঁর গুণে জনগণ এতই মুগ্ধ যে, সাধারণ জনগণ প্রত্যেকে নিজেকে সৈয়দ আবুল হোসেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন। তিনি তার কর্ম দিয়ে জনগণের সাথে এমন এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা ছিন্ন করার সাধ্য কারও নেই।
কালকিনির সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, খোয়াজপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, ডাসারের শেখ হাসিনা উইমেন্স একাডেমি এন্ড কলেজ, ডি কে সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমী এন্ড কলেজে শিক্ষাক্ষেত্রে অহঙ্কারের নৈবদ্যিক সংযোজন। তাঁর বৃত্তিতে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল হোসেন সাধারণ পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে ওঠা অসাধারণ একজন মানুষ। যার শেকড় পাতালে, মস্তক কল্পনার আকাশ ছুঁয়ে স্তম্ভিত অপলক।
কেন তিনি শিক্ষাবিস্তারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় এত ব্যাকুল? অনেকে নামের জন্য, প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠান করেন। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের মানসিকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেন তিনি শিক্ষার প্রসারে এত উদগ্রীব তা তাঁর জবানিতেই শোনা যাক :
টলস্টয় বলেছেন- ‘বিদ্যালয়ই উন্নতির মাধ্যম। বিদ্যালয়ই মানুষকে সভ্য করে তোলে।’ এলজিা বফ চমৎকার কথা বলেছেন। তার মতে, ‘বয়স্কদের জন্য কারাগার অথবা ফাঁসিমঞ্চ নির্মাণ করার প্রয়োজন কমে যাবে যদি উত্তম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ আমি মনে করি এর চেয়ে সত্য কথন আর হয় না। বিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জন করলে চরিত্র গঠিত হয়। ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য বোঝা যায়। অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পায়। তাহলে আর কারাগার বা ফাঁসির মঞ্চের প্রয়োজন রইল কোথায়? সুতরাং আমি মনে করি কারগার নির্মাণে মনোযোগ দেয়ার চেয়ে অধিক হারে বিদ্যালয় নির্মাণে, শিক্ষার প্রসারে মনোযোগ দেয়া দরকার। সে কারণেই আর একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, ‘স্কুল তৈরির মতো মহৎ ও কল্যাণকর কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই’। এই চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি আমার সাধ্যমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমি মনে করি, এটা আমার সামাজিক অঙ্গীকার। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আমার কর্তব্য। আমি সিক্ত আমার এলাকার মানুষের ভালোবাসায়। তাদের কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। সেটা আমি শোধ করতে পারি শিক্ষার আলো জ্বেলে বা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ব্যক্তিকে সাহায্যদানের আবেদন সব সময়ই সাময়িক। প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আবেদন কালজয়ী।’
তাহলে গ্রামে কেন? তিনি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রামকে কেন বেছে নিয়েছেন? এর উত্তরও তাঁর জবানিতে শুনতে পারি :
গ্রামই আমাদের আসল ঠিকানা। অথচ এই গ্রাম আজ অবহেলিত। শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। কিন্তু গ্রামের লোকের লেখাপড়ার প্রতি কারও তেমন মনোযোগ নেই। গ্রামের জনগোষ্ঠীর শিক্ষার বিপুল চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যেই আমার প্রয়াস।
আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনের শিক্ষক ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. তমিজ উদ্দিন বলেছেন, “অনেক কর্মপ্রাণ লোক আমি দেখিয়াছি। তাহারা কাজ করিতে করিতে রুক্ষ হইয়া যায়। কাজ করিতে করিতে নিজেরাই যন্ত্র হইয়া যায়। সৈয়দ আবুল হোসেন তেমন ছিল না। সে কাজ করিতে করিতে আরও প্রফুল্ল হইয়া উঠিত। কাজ ছিল তাহার প্রাণ তবে সে প্রাণে ছিল স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, হাসি-কান্না, রস, কৌতুক, বিশ্রাম এবং সুকুমার চিত্ত। ছোট বেলা হইতে দেখিয়াছি জীবন তাহার কাছে কাজের সমষ্টি ছাড়া কিছু নয়। কর্মহীন জীবন তাহার কাম্য নয়। তাই সে কাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়া থাকে। কাজের সাথে আর একটি জিনিসকে সে অবিচ্ছেদ্য রাখে, সেইটি হইল নিষ্ঠা। কর্ম আর নিষ্ঠার মিশ্রণ ঘটাইয়া সে এমন এক শরবত তৈয়ার করিয়াছে, যাহা কেহ পান করিলে পরশপাথর হইয়া যায়। ঐ পরশপাথর যাহারা ধরে, তাহারা আপন মহিমায় হইয়া ওঠে সাফল্যের বর, সাধনার নির্ঘণ্ট।”
সৈয়দ আবুল হোসেন শুধু রাজনীতিক নন, লিডারও বটে। তথাকথিত নেতা নন, নেতার সকল প্রায়োগিক ও তাত্ত্বিক উপাদানে পরিপূর্ণভাবে বিদুষিত একজন মহান নেতা। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ মুহাঃ জালাল উদ্দিনের ভাষায়, একজন নেতার যে সকল গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নেতার যে সকল গুণাবলীকে অনিবার্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার সবটাই সৈয়দ আবুল হোসেনে বিদ্যমান। তিনি কৃতজ্ঞতায় আকাশ। যাদের ভালোবাসায় সিক্ত তাদের জন্য রিক্ত হতে প্রস্তুত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তাঁর অনাবিল চরিত্রের নিখাদ অলঙ্কার। তিনি মনে করেন, কারও প্রতি অভিযোগ নয়, বরং কারও প্রতি বিরক্ত হলে তিনি কৃতজ্ঞতায় সিক্ত হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন।২৪
বন্ধু হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অবলোকন করলে সে বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে যায়- ফ্রেন্ড ইজ বরন, নট মেইড। সৃষ্টিকর্তা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে সেরা জীবন উপভোগের জন্য যে সকল ঐশ্বর্র্য দিয়েছেন তš§ধ্যে বন্ধুই সর্বশ্রেষ্ঠ- সৈয়দ আবুল হোসেনের সাথে বন্ধুত্ব হলে এটিই সবার মনে হবে। ২৫ এ মুহূর্তে এডগার ওয়াটসন হো এর একটি কথা আমার মনে পড়ছে:. এ রকম দেখেছি আমি সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে। সাধারণত কেউ বিপদে পড়লে শুভাকাক্সক্ষীরা এগিয়ে এসে প্রয়োজনের কথা জানতে চান; জানতে চান কী প্রয়োজন, কতটুক প্রয়োজন। সৈয়দ আবুল হোসেনকে আমি এমন সাধারণ শুভার্থীর মতো আচরণ করতে কখনও দেখিনি। কেউ বিপদে পড়লে তিনি এসে যা প্রয়োজন তা করে দিয়ে যান স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো প্রশ্ন নাÑকরে। এটি বন্ধু ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।
সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো বিশাল এক ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ অবয়ব রচনা দূরে থাক, তার কর্মকান্ডের একটি মুহূর্তের প্রকাশও স্বল্প সময়ে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একদিন আমার একটা কথার জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এরপর আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি তা পালনের। পারি না। দূর হতে দেখতে দেখতে কোন্ সময় কখন কিভাবে নিবিড় হƒদ্যতায় একাত্ম হয়ে গেছি, হারিয়ে গেছি জানি না। অতঃপর বুঝতে পারলাম : অমন পরিশুদ্ধ বিশালতায় হারিয়ে যাবার কষ্ট কত আনন্দের। তার প্রত্যয়ী পরিভাষার কোমল লাস্যে প্রেমের সাথে মধুময় জীবনের প্রত্যাশা বৃষ্টির মতো শ্যামল করেছে আমাদের চেতনা ও রাজনীতির জটিল ক্ষেত্র। রাজনীতিক সন্ত্রাস, সংকীর্ণ স্বার্থ, হানাহানি, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সৈয়দ আবুল হোসেনের অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিকে বহুলাংশে পরিশীলিত করতে সক্ষম হয়েছে। অন্তত তাঁর সংসদীয় এলাকার রাজনীতিকে সম্পূর্ণ কুষমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এলাকায় সকল দল, সকল মত, সকল ধর্ম অভিন্ন হƒদ্যে একাকার। তিনি ব্যবহারে বিনয়ী, কর্মে নিষ্ঠ, সিদ্ধান্তে বলিষ্ঠ, আচরণে শিষ্ট, বিচক্ষণতায় ঋদ্ধ, ব্যবস্থাপনায় মার্জিত এবং কৃতজ্ঞতায় অনুপম। পৃথিবীতে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের শুভাগমন ঘটে যারা সূর্যের সাথে হাসে, বৃষ্টির সাথে কাঁদে, ঝর্ণার সাথে গান গায় প্রতি প্রহরে, খেলায় জীবনের চৈতালী সাজাতে চায়। সৈয়দ আবুল হোসেন এমন চরিত্রের অধিকারী একজন বিরল মানুষ।
মানবতাবাদী সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে নিজের পরিবারের সদস্যের মতো মূল্যায়ন করে থাকেন। তিনি তাদের সুখ-দুঃখ ও হাসি-বেদনার সার্বক্ষণিক সাথী। কর্মচারীদের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা রূপকথার গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর। যে ব্যক্তি সাকো ইন্টারন্যাশনালে বিশ বছর চাকুরি করেন তাকে তিনি উপযুক্ত মানের একটি ফ্লাটবাড়ি কিনে দেন। এটি কেন করেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন: যে ব্যক্তি জীবনের বিশটি বছর আমার সাথে কাটিয়ে দেন, তাঁর আর নিজের জন্য কিছু থাকে না। সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান, বেসরকারি কর্মচারীরা কিছু পান না। চাকুরি জীবনের শেষে একটা ফ্লাট পাচ্ছেন এ নিশ্চয়তা তাদের কর্মস্পৃহা ও প্রতিভাকে বিকশিত করবে, পারিবারিক জীবন হবে আনন্দময়, সংগতকারণে তারা নিশ্চিত মনে প্রতিষ্ঠানের সেবা করে যাবার উদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে কাজ করার মানসিকতা পাবে। একজন মানুষ কত দূরদর্শী এবং কত মানবপ্রেমী হলে এমন করতে পারেন, তা সহজে অনুমেয়।
ভিনস্ লেম্বর্ডির একটা কথা মনে পড়ে গেল। তিনি বলেছেন- পাহাড়ের চূড়োয় কেউ পতিত হয় না। পাহাড়ের চূড়োয় উঠতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন শ্রম, মেধা আর প্রয়াস। সৈয়দ আবুল হোসেন খ্যাতির চূড়োয়। তিনি ওখানে পতিত হননি। তলা হতে আস্তে আস্তে চূড়োয় উঠেছেন। এ আরোহণে তিনি কারও সাহায্যের অপেক্ষায় থাকেননি। নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা আর একাগ্রতার মাধ্যমে জয় করেছেন শৃঙ্গ।
বাংলা সাহিত্যের দিকপাল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘সৈয়দ আবুল হোসেন খুবই শ্রদ্ধেয় এবং একজন বিরাট মাপের মানুষ।’ তিনি সময়, মানুষ, রাজনীতি, পারিপার্শ্বিক বলয়, আর্থসামাজিক অনুরণন ও স্বীয় জীবনকে পরিশীলিত মাধুর্যে সমন্বয় করে আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রকে অমিয় মহিমায় উদ্ভাসিত করতে সক্ষম একজন পরিপূর্ণ মানুষ। সময়কে তিনি আধুনিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই তিনি সময়ের পরশপাথর।
মোহাম্মদ আমীন : লেখক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও ইতিহাসবেত্তা।
No comments:
Post a Comment