Wednesday, 14 October 2015

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন _একটি অসাধারণ গ্রন্থ / ড. হায়াৎ মামুদ

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন গ্রন্থ আলোচনা

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা একসঙ্গে দুটোই। মায়ের মুখের বুলি ঠোঁটে নিয়ে জন্মেছি, তাই মাতৃভাষা বাংলা আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে কে, এমন সাধ্য কার আছে? দস্যুগিরি করে কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি সরকার ১৯৫২ সালে, সে-কারণেই দানা বেঁধে
উঠেছিল বাহান্নর ভাষা-আন্দোলন আর ২১শে ফেব্র“য়ারি ছাত্রদের বুকের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল ঢাকা শহরের রাজপথ। রাষ্ট্রভাষার জন্য সংগ্রাম ও সেই যুদ্ধে বাঙালির বিজয়লাভ আমাদের নিজস্ব অর্জন, আমাদের গৌরব ও অহঙ্কার। আমাদের দেশে সামাজিক স্তরে সকল কাজকর্মে মাতৃভাষার ব্যবহার বাঙালির ললাটে রাজটীকা হিসেবে এখন জ্বলজ্বল করছে এবং করতেই থাকবে যতদিন পৃথিবীর বুকে একটি বঙ্গসন্তানও জীবিত থাকবেন। 
কিন্তু এই পরিপ্রেক্ষিত বাস্তব ঘটনা হলেও নিদারুণ অন্য একটি সত্য কোনো রকমেই অস্বীকার করার উপায় নেই, সেটি হল : মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অবহেলা ও ঔদাসীন্য মোটেই কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। এর কারণ, আমরা মাতৃভূমিকে ভালবাসতে ভুলে যাচ্ছি। নিজের জন্মভূমি নিয়ে অহঙ্কার ও আনন্দ না থাকলে মাতৃভাষা নিয়ে কৌতূহল-ভালবাসা-গর্ব-গৌরব কিছুই থাকার তো কথা নয়। সেই অবস্থাই যেন এখন দাঁড়িয়েছে। এর চেয়ে লজ্জার ও দুঃখের আর কিছু কি হয়? এমন কলঙ্কজনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে হলে করণীয় কর্তব্য মাত্র একটিই আছে : নিজের ভাষাকে ভালোমতো জানা। তার অর্থ নির্ভুল বানান, বাক্যের ভিতরে শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগ, বাক্যগঠন যেন শ্র“তিমধুর হয় সেদিকে মনোনিবেশ করা। দেশের ভিতরে দেশবাসী সকল সন্তানই মাতৃভাষাতেই কথা বলে, মায়ের মুখের বুলি শুনতে শুনতেই সে মাতৃভাষাকে রপ্ত করে নেয়, পড়তে-লিখতে না জানলেও মাতৃভাষা বলতে তার কোনো অসুবিধেই হয় না। মাতৃভাষা বলতে সে কোনো ভুল করছে না, শব্দের উচ্চারণ নির্ভুলভাবে বলছে এমনও হয়তো নয়। কিন্তু যে শুনছে তার বুঝতে কোনো ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে না; এর কারণ আমরা কথা বলার সময় মাথার নাড়াচাড়া, হাতের ভঙ্গি, চোখের চাহনি ইত্যাদি দিয়ে মুখের বলাটাকে বাস্তবতায় রূপ দিই। গালগল্প করার সময়ে কি কথা বলার সময়ে আমরা সব সময়ে পুরো বাক্য যে বলি এমনও হয়তো নয়, কিন্তু সে-ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় দেহের বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। 
কিন্তু যখন আমার সামনে কেউ নেই, মুখে কাউকে কিছু বলছি না, কিছু লিখতে হচ্ছে কাউকে পড়াবার জন্যে, তখন লেখাটিকে তো শুদ্ধ করতে হবে, নইলে আমার বক্তব্য সে বুঝবে কী করে। বাধা/বাঁধা, করা/কড়া, কুল/কূল, কোণ/কোন, দিন/দীন, পক্ষ/পক্ষ্ম, পরা/পড়া, পাণি/পানি, পার/পাড়, বিনা/বীণা, মাষ/মাস এবং এ ধরনের আরো বহু শব্দ আছে যেগুলো শুনতে অবিকল এক, অথচ লিখতে গেলে বর্ণের পার্থক্যে অর্থ পাল্টে যায় আকাশ-পাতাল। এসব কারণেই বানান নির্ভুল হওয়া একান্তই প্রয়োজন। 
বানানের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সমাধান পেতে পারি অভিধান দেখলে। বানানে যেখানেই খট্কা লাগছে তখনই অভিধান খুললেই সব সমাধান। কিন্তু তেমন আমরা বড়ো একটা করি না। কারণ হল আলস্য। আলসেমি করে, কুড়েমি করে অভিধানের কাছে আর যাই না। তাহলে কী করে চলবে? পড়াশোনার ব্যাপারে একটুখানি পরিশ্রম অন্তত করতে হবে বৈকি। 
‘বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন’ বইটি আলসে পাঠকের ভয় ভাঙানোর জন্যেই তৈরি করা হয়েছে। ড. মোহাম্মদ আমীন এত খেটেখুটে আপনার জন্য বইটি লিখলেন, গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রকাশক সে-বই মুদ্রিত করে সকলের চোখের সামনে এনেও দিলেন, অথচ আপনি একবার উল্টেপাল্টে দেখবেনও না? তাও কি হয়!
দেখলে কিন্তু মজাই লাগবে। আর কিঞ্চিৎ উপকার যে না পাবেন তাও তো নয়। বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি গ্রন্থ। এমন একটি অসাধারণ গ্রন্থ লেখার জন্য ডক্টর আমীনকে সাধুবাদ। সকলের কল্যাণ হোক।